• হোম > খুলনা | বাংলাদেশ > চৌগাছায় স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে ঋণের বোঝা নিয়ে নির্বাক প্রেমবালা

চৌগাছায় স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে ঋণের বোঝা নিয়ে নির্বাক প্রেমবালা

  • বুধবার, ১৮ আগস্ট ২০২১, ১৫:৫৭
  • ৪১৫

 চৌগাছায় স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে ঋণের বোঝা নিয়ে নির্বাক প্রেমবালা

যশোরের চৌগাছায় স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে প্রেমবালা দাস একদম নির্বাক হয়ে গেছেন। আকস্মিক স্বামী ও সন্তান হারিয়ে কথা বেরুচ্ছে না তার মুখ দিয়ে। সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রথমে মারা যান তার স্বামী মধু মঙ্গল দাস (৪০), এরপর বাবাকে উদ্ধার করতে গিয়ে মারা যান ছেলে সাগর মঙ্গল দাস (২৫)। পরিবারে উপার্জনক্ষম স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রেমবালা দাস। অপরদিকে, রয়েছে বিভিন্ন এনজিওর তিন লাখ টাকার বেশি ঋণের বোঝা।

প্রেমবালার সংসারে রয়েছেন তার অসুস্থ শাশুড়ি, ছোট ছেলে প্রতিবন্ধী সনাতন, এক মেয়ে কাকলীবালা, সাগরের স্ত্রী সুমতিবালা ও তার তিন বছর বয়সী সন্তান।

স্বামী ও সন্তানের অকাল মৃত্যুতে কীভাবে চলবে সংসার- তা জানেন না এই নারী। এখন তার কেবল ঝরছে অশ্রু। সোমবার সেপটিক ট্যাংকে নেমে প্রেমবালার স্বামী ও ছেলের একসাথে করুণ মৃত্যু হয়। তারা উপজেলার সদর ইউনিয়ন চৌগাছার দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামের ঋষিপাড়ার বাসিন্দা।

বুধবার সরেজমিনে চৌগাছা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামের ঋষিপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, গোটা গ্রাম যেন শোকে কাতর। জানা যায়, মধু মঙ্গল পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে মাত্র আড়াই শতক জমির ওপরে টিনের একটি ঝুপড়িতে বসবাস করতেন। ঝুপড়ির মধ্যে বাসন, আসবাবপত্র, পোশাক দেখা না গেলেও এনজিওর কিস্তির বইগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

নিহত সাগরের স্ত্রী সুমতিবালা দাস জানান, শ্বশুর মধুদাস ও তার স্বামী সাগর দাস পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজের (সুইপার) পাশাপাশি ভ্যান চালাতেন। সম্প্রতি লকডাউনে ঘরে জমানো টাকা, চাল বলতে যা ছিল সব শেষ হয়ে যায়। একমুঠো চালও নেই।

তিনি জানান, ঘরে খাবার না থাকায় সোমবার সকালে শ্বশুর পরিচ্ছন্ন কাজে যান না খেয়েই। যাওয়ার সময় বলে যান, অল্প সময়ের কাজ। খুব শিগগিরই বাড়িতে ফিরে আসবেন। কাজটা করলে বেশ টাকা পাওয়া যাবে। দুই-তিনটা ঋণের কিস্তি শোধ হবে।

এ সময় চোখে পড়ে ঝুপড়ির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের বই। সেগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি, একটি বাড়ি একটি খামার, শক্তি ফাউন্ডেশন, আদ-দ্বীন, সিএসএস, আশা, আরআরএফ, সূর্যমুখী ইত্যাদি।

মৃত মধু দাসের স্ত্রী প্রেমবালা জানান, ওগুলো ছাড়া আরো কয়েকটি ঋণের বই রয়েছে, যা এখন পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি জানান, আমার স্বামী মৃত মধু ও ছেলে সাগরের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে তিন লাখেরও বেশি টাকা ঋণ নেয়া রয়েছে। এ সময় চোখে পানি ও কণ্ঠে কান্না নিয়ে প্রেমবালা বলেন, নিজেদের কথা বাদ দিলাম, তিন বছরের শিশুর খাবার আর অসুস্থ শাশুড়ির ওষুধ কেনার টাকা কোথায় পাবো। তার ওপরে এনজিও ঋণের কিস্তি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্মম এই মৃত্যুর ঘটনায় আমি মর্মাহত। ঘটনার পর থেকেই আমি তাদের পাশে আছি। পরিবারটির বেঁচে থাকা সদস্যদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, স্বজনহারা পরিবারের জন্য খাদ্যসামগ্রী ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ আগস্ট সকালে উপজেলার সিংহঝুলী গ্রামের বাসিন্দা হাদিউজ্জামান দফাদারের বাসার সেফটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে প্রথমে বাবা মধুদাস এবং পরে ছেলে সাগর দাসের মৃত্যু হয়।

এ ব্যাপারে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ জানান, মৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। সে কারণে থানায় অপমৃত্যুর মামলাও নথিভুক্ত করা হয়নি।

সূত্র: নয়াদিগন্ত


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/110574 ,   Print Date & Time: Monday, 16 June 2025, 07:42:49 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group