• হোম > ঢাকা | বাংলাদেশ > মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেয়ে তিন হাজার মানুষকে খাওয়ালো পরিবার

মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেয়ে তিন হাজার মানুষকে খাওয়ালো পরিবার

  • বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২২, ১৬:২৫
  • ৪০০

 সংগৃহীত ছবি

পার হয়েছে স্বাধীনতার ৫০ বছর। কিন্তু এই দীর্ঘ বছর পর সর্বশেষ গেজেটে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন শহীদ গোলজার হোসেন মৃধা। মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি মেলায় এলাকার তিন হাজার মানুষকে একবেলা খাওয়ালেন এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা। তাদের এ ব্যতিক্রম আয়োজনে এলাকায় আলোচনা হবার সাথে সাথে ব্যাপক প্রশংসা করেছেন সাধারণ মানুষ।

আর এমন ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার (১২ জানুয়ারি) গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার গোয়ালগ্রামে। ৯৭ নং গোয়ালগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিশাল এ ভোজের আয়োজন করা হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন।

জানা গেছে, গোলজার হোসেন ১৯৫২ সালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের গোয়ালগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আব্দুল করিম মৃধা। গোলজার হোসেন মৃধা আলিমের ছাত্র থাকাবস্থায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একাত্তর সালে খান শিহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার উলপুরে পাক সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে বুলেটের আঘাতে মারা যান। পরে ওই এলাকায় তাকে সমাহিত করা হয়।

কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তার নাম মুক্তিযোদ্ধার গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ২০২১ সালের সর্বশেষ গেজেটে সাধারণ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় গোলজার হোসেনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

শহীদ গোলজার হোসেনের সহযোদ্ধা এম এম জালাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, গোলজার আহম্মেদ আমার সহযোদ্ধা ছিলেন। তিনি আমার সাথে যুদ্ধাকালীন অবস্থায় শত্রুসেনার আক্রমণে নিহত হন। এ সময় আমার আরও দু’জন সহযোদ্ধা নিহত হন। একাত্তর সালের সেই স্মৃতি মনে পড়লে আজও আঁতকে উঠি। ৫০ বছর ধরে সেই স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি। তবে ৫০ বছর পর এসে সহযোদ্ধা গোলজার হোসেনের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেখে যেতে পারলাম। এটা অত্যন্ত আনন্দের খবর।

শহীদ গোলজার হোসেনের ছোট ভাই মো. আব্দুস সালাম মৃধা অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, একাত্তর সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভাইকে হারিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও তার নাম গেজেটভুক্ত করতে পারেনি। সর্বশেষ ২০২১ সালের যাচাই-বাছাইতে গেজেটভুক্ত হয়েছে। আমার ভাইয়ের এক বছরের মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ১ লাখ ৬৪ হাজার ও সাথে আরও টাকা দিয়ে তার রুহের আত্মার শান্তির জন্য তিন হাজার মানুষকে একবেলা খাইয়েছি। আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাওয়ায় আমি নিজেকে ধন্য ও গর্বিত মনে করছি।

মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাসুদ রানা বলেন, শহীদ গোলজার হোসেন মৃধার ভাইয়েরা যা দেখিয়েছে, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ ধরণের আয়োজন এর আগে কখনও দেখিনি। খুব ভালো লাগলো।

কাশিয়ানী থানার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইনায়েত হোসেন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েও গোলজার ৫০ বছর ধরে স্বীকৃতি পাননি। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকৃতি পেয়েছেন এটা অনেক আনন্দের খবর।

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রথীন্দনাথ রায় বলেন, সর্বশেষ প্রকাশিত গেজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলজার হোসেনের নাম এসেছে। দেরিতে হলেও তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন।

সূত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/116114 ,   Print Date & Time: Wednesday, 18 June 2025, 12:00:01 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group