• হোম > আইন-অপরাধ | ঢাকা | বাংলাদেশ > নির্দোষ সোহাগকে জেলে পাঠিয়ে বাইরে ঘুরছিলেন সাজাপ্রাপ্ত সোহাগ

নির্দোষ সোহাগকে জেলে পাঠিয়ে বাইরে ঘুরছিলেন সাজাপ্রাপ্ত সোহাগ

  • রবিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২২, ২০:০৯
  • ৪০১

 নির্দোষ সোহাগকে জেলে পাঠিয়ে বাইরে ঘুরছিলেন সাজাপ্রাপ্ত সোহাগ

২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর কদমতলী থানার আউটার সার্কুলার রোডে নোয়াখালী পট্টিতে টিটু নামের এক ব্যক্তিকে প্রকোশ্যে হত্যা করা হয়। হত্যার পর মূল আসামি সোহাগ জামিন নিয়ে ছিলেন বাইরে। এ মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও টাকার বিনিময়ে তার জায়গায় কারাভোগ করছেন সোহাগ নামের অন্য আরেকজন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।
শনিবার রাতে রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকা থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসল সোহাগকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১০।

র‌্যাব জানায়, প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে জেল হাজতে যায় মাদকাসক্ত হোসেন ওরফে নকল সোহাগ। তিনি একজন মাদকাসক্ত। হোসেন মাদকাসক্ত হওয়ায় বাল্যকাল থেকেই প্রকৃত সোহাগের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সোহাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকৃত সোহাগ মো. হোসেনকে জেল হাজতে পাঠানোর আগে নকল সোহাগকে ২/৩ মাসের মধ্যে বের করে নিয়ে আসবে বলে আশস্ত করে। তবে আদালত তাকে জামিন না দেয়ায় ২০১৮ সাল থেকে সাজা ভোগ করছে নকল সোহাগ।

রোববার মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মাহফুজুর রহমান।

তিনি বলেন, ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর কদমতলী থানার আউটার সার্কুলার রোডে নোয়াখালী পট্টিতে নান্নু জেনারেল স্টোরের সামনে দুপুরে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডে সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ (৩৪), মামুন (৩৩), সোহাগ ওরফে ছোট সোহাগ (৩০) এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জন জড়িত।

তিনি আরও বলেন, মামলার আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হুমায়ুন কবির ওরফে টিটুকে হত্যার জন্য গুলি করে। গুলি ভিকটিম টিটুর মাথার ডান পাশে লেগে গুরুতর রক্তাক্ত হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার কদমতলী থানায় ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর মামলা করেন। মামলা নম্বর ৪৯।

র‌্যাব জানায়, সোহাগ (৩৪) ওরফে বড় সোহাগ এই মামলার এক নম্বর আসামি। তিনি ২০১০ সালের ২২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন এবং ২০১৪ সালের মে মাসের ১৬ তারিখে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই পলাতক থাকেন। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর ১ নং আসামি সোহাগ (৩৪) ওরফে বড় সোহাগের অনুপস্থিতিতে আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। সোহাগ ওরফে বড় সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।

এডিশনাল ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বলেন, রায় ঘোষণার পর আসল সোহাগ ওরফে বড় সোহাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী তার ফুফাতো ভাই ওরফে নকল সোহাগ মো. হোসেন ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদকাসক্ত হোসেন ওরফে নকল সোহাগ প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে জেল হাজতে যান। মো. হোসেন মাদকাসক্ত হওয়ায় বাল্যকাল থেকেই বড় সোহাগের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। প্রকৃত সোহাগ মো. হোসেনকে জেল হাজতে পাঠানোর আগে নকল সোহাগকে ২/৩ মাসের মধ্যে বের করে নিয়ে আসবে বলে আশস্ত করে।

র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, গত ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে একজন সাংবাদিকের উল্লিখিত টিটু হত্যা মামলায় একজনের পরিবর্তে অন্যজন জেলা খাটার বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে আদালত কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চায়। প্রতিবেদনে ২০১০ সালে আসামি সোহাগ আর বর্তমানে হাজতে থাকা নকল সোহাগের অমিলের বিষয়টি উঠে আসে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের রিপোর্টে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়।

র‌্যাব জানায়, বিষয়টি নিয়ে ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে র‌্যাব-১০ এর অপারেশন টিম ও র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা টিম কাজ করে আসছিল। এরই মধ্যে বিশেষ দায়রা আদালত ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ প্রকৃত আসামির (সোহাগ) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক বরাবর অনুলিপি পাঠান।

র‌্যাব কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রকৃত সোহাগ উল্লিখিত ঘটনা প্রকাশের বিষয়টি বুঝতে পেরে কৌশলে দেশত্যাগের চেষ্টা শুরু করে। এর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে পাসপোর্ট তৈরি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসাও সংগ্রহ করেন তিনি। কিন্তু দেশত্যাগের ক্ষেত্রে করোনার টিকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় শনিবার করোনার ২য় ডোজ নিতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ এর অপারেশন টিম র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় শনিবার দুপুর ২টায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সোহাগ ওরফে বড় সোহাগকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার প্রকৃত আসামি সোহাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ২টি হত্যা মামলা, ২টি অস্ত্র মামলা ও ৬টি মাদক মামলাসহ মোট ১০টি মামলা রয়েছে।

সূত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/117281 ,   Print Date & Time: Tuesday, 17 June 2025, 09:57:44 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group