• হোম > আন্তর্জাতিক > করোনায় স্বামীর মৃত্যু, চিকিৎসার ৪৬ লাখ টাকা দান করলেন তরুণী!

করোনায় স্বামীর মৃত্যু, চিকিৎসার ৪৬ লাখ টাকা দান করলেন তরুণী!

  • মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১২:০৩
  • ৪৯৭

 মৌসুমী

ঘটনাটি ভারতের ওড়িশার। স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সবে সংসার শুরু করেছিলেন মৌসুমী। কিন্তু ভাগ্য যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। গোটা দেশে তখন কোভিড স্ফীতি চরম পর্যায়ে। ২০২১ সালের ৫ মে। কোভিডে আক্রান্ত হলেন মৌসুমীর স্বামী অভিষেক। প্রথমে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় অভিষেককে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা জানালেন তার ‘এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন (একমো)’ প্রয়োজন।

ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ ছিল না মৌসুমীদের। তাছাড়া ওড়িশায় এই চিকিৎসাও সহজলভ্য ছিল না। কিন্তু একমো-র জন্য এত টাকা পাবেন কোথায়? নেটমধ্যমে সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন মৌসুমী। তাতে সাড়াও পেতে শুরু করেন যথেষ্ট। তারপরই অভিষেককে নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন চিকিৎসার জন্য।

জুন মাস। অভিষেককে বিমানে করে কলকাতায় আনা হয়েছিল। ৮৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালানোর পর হেরে যান অভিষেক। বিয়ের ছ’মাসের মাথায় স্বামীকে হারালেন মৌসুমী।
মৌসুমী মোহান্তি। ওড়িশার ভদ্রকের তরুণী। বিয়ে হয়েছিল মান্দারির বাসিন্দা অভিষেক মহাপাত্রের সঙ্গে। মৌসুমী জানান, অভিষেকের চিকিৎসার জন্য ৪০ লাখ রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৬ লাখ টাকা) জমা হয়েছে। এখনও অনেকে সাহায্য করছেন। কিন্তু যার চিকিৎসার জন্য সেই টাকা, তিনিই যখন নেই, সেই টাকা অন্য কারও কোভিড চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন মৌসুমী। তিনি বলেন, “ওই সময় যেভাবে মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, আর্থিক সহযোগিতা করেছেন, লকডাউনের কারণে আর্থিক টালামাটাল অবস্থার মধ্যেও যেভাবে তারা এগিয়ে এসেছেন তা সত্যিই অভাবনীয়। আমি কৃতজ্ঞ সেই সকল মানুষের কাছে।”

গত ১৭ জানুয়ারি বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ভদ্রকের জেলাশাসকের দফতরে যান মৌসুমী। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৩০ লাখ রুপি দান করেন। বাকি ১০ লাখ রুপি জেলার রেড ক্রস সোসাইটি-তে দান করে দেন।

মৌসুমী বলেন, “আমরা সবাই মহামারীর ফল ভুগছি। যদি একজনের জন্য রাখা চিকিৎসার টাকা অন্য কারও কাজে লাগে, তার চেয়ে আর বড় কী-ই বা হতে পারে। যেহেতু অভিষেক আর আমাদের মাঝে নেই, তাই ওর চিকিৎসার জন্য সংগ্রহ করা টাকা দুঃস্থ মানুষদের চিকিৎসার কাজে লাগাতে চাই। তাই সেই টাকা দান করলাম।”

এখনও অনেকে সাহায্য করার জন্য ফোন করছেন মৌসুমীকে। পাশাপাশি এমন অনেক মানুষও ফোন করছেন, যারা ঠিক মতো চিকিৎসা করাতে পারছেন না। মৌসুমী জানিয়েছেন, কিছু টাকা তার হাতে রয়েছে, সেই টাকা ওই মানুষদের চিকিৎসার কাজে লাগাবেন।

বিজ্ঞানে স্নাতক মৌসুমী। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন আমলা হওয়ার। এক স্বপ্ন বিয়ের ছ’মাসের মধ্যেই ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। এখন আমলা হওয়ার স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরেই জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান মৌসুমী। ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন।

মৌসুমীর বাবা চিত্তরঞ্জন মোহান্তি একটি অসরকারি সংস্থার পিওন। তিনি বলেন, “মেয়ে নতুন পথে এগিয়ে যাক। ভদ্রকের জেলাশাসক মৌসুমীকে কাজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। রাজ্যে এখন পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি জারি। তাই নির্বাচন শেষ হলেই মৌসুমীর কাজের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানিয়েছেন জেলাপ্রশাসক।” সূত্র: আনন্দবাজার

সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/117445 ,   Print Date & Time: Thursday, 18 December 2025, 04:04:23 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group