• হোম > ঢাকা | নারী ও শিশু > কালকিনিতে শশুর বাড়ির নির্যাতনে গৃহবধুর গর্ভের সন্তান নষ্ট

কালকিনিতে শশুর বাড়ির নির্যাতনে গৃহবধুর গর্ভের সন্তান নষ্ট

  • সোমবার, ২২ আগস্ট ২০২২, ১৯:৫১
  • ৪১৪

কালকিনিতে শশুর বাড়ির নির্যাতনে গৃহবধুর গর্ভের সন্তান নষ্ট
কালকিনি (মাদারীপুর) প্রতিনিধিঃ স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দাবীকৃত যৌতুকের ৫লক্ষ টাকা দিতে না পারায় ও স্বামীর পরকিয়ায় বাঁধা দেয়ায় মাদারীপুরের কালকিনিতে মোসাঃ নাজমুন নাহার নুপুর-(৩২) নামের এক গৃহবধুর ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে তার শশুর বাড়ির লোকজন।

এতে করে নির্যাতনের ফলে নষ্ট হয়ে গেছে ওই গৃহবধুর গর্ভে থাকা ৪৫দিনের সন্তান। উপজেলার সিডিখান এলাকার চর দৌলতখান গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে এ নির্যাতনের ঘটনায় ওই নির্যাতিত গৃহবধু বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করলে হামলাকারী শ্বশুড় সামসুদ্দিন বেপারী, ভাসুর রহমান বেপারী, জা নাছরিন বেগম ও দেবর হাসেম বেপারীকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

কিন্তু গৃহবধুকে মামলা তুলে নিতে আসামী পক্ষের লোকজন বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকী প্রদর্শন ও জেল থেকে বের হয়েই হত্যাকরা হবে বলে হুমকী দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অপরদিকে গৃহবধুকে নির্যাতনের সময় তার ছেলে বেল্লাল হোসেন বেপারী-(১৩) মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তার মাথায় আঘাত করা হলে সেও ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আজ সোমবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভূক্তভোগী পরিবার।

জানাগেছে, পারিবারিকভাবে ২০০৮সালে সিডি খান এলাকার চরদৌলতখান গ্রামের সামসুদ্দিন বেপারীর ছেলে মোঃ কাওছার বেপারীর সাথে পার্শ্ববর্তী সাহেবরামপুর এলাকার দক্ষিণ সাহেবরামপুর গ্রামের মোঃ কাঞ্চন ফকিরের মেয়ে মোসাঃ নাজমুন নাহার নুপুরের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ৫ভড়ি স্বর্ণালঙ্কার দেয়া হলেও তা লম্পট স্বামী কাওছার বেপারী জুয়া খেলে সব শেষ করে ফেলে। পরে বিদেশ যাওয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ৩লক্ষ টাকা যৌতুক আনতে চাপ প্রয়োগ করে। মেয়ের সুখের জন্য সে সময়ে ৩লক্ষ টাকা দেয়া হলে তা দিয়ে স্বামী কাওছার দুবাই চলে যায়। সেখান থেকে ফিরে সে পূনরায় সৌদি আরব যায়। কিন্তু তাতেও তার মন ভরে না।

তিনি ফের ইতালি যাওয়ার জন্য শশুর বাড়িতে আবার টাকা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু অসহায় গৃহবধু মোসাঃ নাজমুন নাহার নুপুরের পিত্রালয়ের লোকজন তা দিতে না পারায় বেড়েযায় নির্যাতনের মাত্রা।

অপরদিকে একাধিক পরকিয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে প্রতারক স্বামী কাওছার। পরকিয়ার বিষয়টি ১৩ বছরের ছেলের সামনে ধরাপড়লে ছেলে এবং স্ত্রী বাঁধা দিলে শুরু হয় মা ছেলের ওপর নির্যাতন। যদিও পরে উপায়ন্তর না দেখে স্বামী কাওছার স্ত্রীকে অন্তঃস্বত্তা রেখে ফের সৌদি আরব চলে যায়। কিন্তু স্ত্রী আর ছেলের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যেতে নিজের পিতা মাতা ভাই ভাবিদের ফোনে নির্দেশ দিতে থাকে। আর তার জেরে গত ৮জুন বিকেলে নির্মম নির্যাতন চালানো হয় ওই গৃহ বধূর উপর।

সডিখান এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান চাঁনমিয়া সিকদার বলেন ‘ ঐ গৃহবধূকে নির্যাতন করা ঐ পরিবারের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তারা আইনি প্রক্রিয়াকে ও ভয় পায় না। ঐ পরিবার সমাজে একটি উচ্ছৃঙ্খল পরিবার হিসেবেই এলাকায় পরিচিত।’ এ নিয়ে একাধিকবার সালিস মিমাংসা কারী সাহেবরামপুর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য বাহারুল ইসলাম বলেন ‘ স্বামী কাওছার কে ইতালি যেতে টাকা না দিলে নির্যাতন করা হবে তা তারা সালিস মিমাংসায় বসলেও প্রকাশ্যেই প্রস্তাব দিত।

কিন্তু তাদের দাবীকৃত টাকা দিতে গৃহবধূ নুপুরের পরিবার অপরাগতা স্বীকার করতো। আমরা মিলেমিশে থাকতে বলতাম। কিন্তু শেষের মারধোর করাটা ছিল একেবারেই অমানবিক।’
গৃহবধূ মোসাঃ নাজমুন নাহার নুপুর বলেন ‘ এর আগেও ছাদ থেকে নামার সময় আমার জা নাছরিন বেগম আমাকে পেছন থেকে ধাক্কাদিয়ে ফেলে দেয়। তখন আমি বেঁচে থাকলেও আমার পেটে থাকা ৪মাসের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। আমার স্বামী আমাকে এর বিচার করা হবে বলে আশ্বাস দেয়ায় তখন মামলা করা হয়নি। তবে পরে বুঝতে পারি আমাকে পরিবারের সিদ্ধান্তে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা। আমি আমার ওপরে করা যুলুম নির্যাতনের বিচার দাবী করি।’

এ ব্যাপারে কালকিনি থানার ওসি মোঃ শামীম হোসেন বলেন, গৃহবধু নাজমুন নাহার নুপুরের মামলায় চার জন আসামীকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/124367 ,   Print Date & Time: Friday, 9 May 2025, 06:09:07 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group