• হোম > জাতীয় > বাস্তবায়িত হচ্ছে না তিস্তা মহাপরিকল্পনা; তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তর

বাস্তবায়িত হচ্ছে না তিস্তা মহাপরিকল্পনা; তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তর

  • শুক্রবার, ২৬ আগস্ট ২০২২, ১২:১৫
  • ৫৪৪

ফাইল ছবি

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের রাজারহাটের তিস্তা পাড়ের মানুষ একের পর এক ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মাসের পর মাস অব্যাহত ভাঙনে শত শত পরিবার নি:স্ব হয়ে পড়েছে। তবে তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন থাকায় আপাতত ভাঙন রোধে উল্লেখ্যযোগ কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড বলে জানিয়েছেন।

 বৃহস্পতিবার(২৫আগষ্ট) সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, তিস্তা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় অনবরত উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ, মাঝের চর, গতিয়াশাম ক্লিনিকপাড়া ও গতিয়াশাম মন্ডলপাড়া গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। তীব্র ভাঙনে খিতাবখাঁ ও মাজের চর গ্রামে নতুন করে গত ১৫দিনে গৃহহারা হয়ে পড়েছে ৫০টি পরিবার। এনিয়ে নদী ভাঙনে গত তিন মাসে ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে সর্বশান্ত হয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে ঘড়বাড়ি, ভিটেমাটি, গাছপালা ও ফসলী জমি। ভাঙন আতঙ্কে বসতভিটা ছেড়ে অনেকে চলে যাচ্ছেন অন্যান্য স্থানে । স্থানীয়দের অভিযোগ বছরের পর বছর এভাবে চললেও ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষ কোন স্থায়ী পদক্ষেপ করছেন না।

 ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের চরখিতাবখাঁ গ্রামে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোখলেছার রহমানের কবরটিও তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে তিস্তায়। ওই গ্রামের একমাত্র চরখিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিরও কাছাকাছি চলে এসেছে নদী। তীব্র ভাঙন অব্যাহত থাকলে ক্ষুধার্ত তিস্তার পেটে চলে যেতে পারে বিদ্যালয়টিও। এঅবস্থায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী অভিভাবকরা।

 গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম বলেন,“আমার মেয়ে জান্নাতি ওই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। গ্রামের একমাত্র প্রাইমারী স্কুলটা নদীতে গেলে বুঝি মেয়েটার লেখাপড়া আর হবে না। গ্রামের জাহাঙ্গীর জানান, নদী মোর বাড়ির কাছোত চলি আসছে। বাড়ি ভাঙলে বউ-বাচ্চোগোর ন্যিয়া কই যামু জানিনা। স্কুল ভাঙলে থ্রীতে পড়া মেয়ে জাকিয়া আক্তারের লেখাপড়াও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। এই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগেও এই বিদ্যালয়টির জায়গা জমি নদীতে চলে যাওয়ার পর এলাকাবাসীর সহযোগীতায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ নতুন বিদ্যালয়টি স্থাপন করেছিল। এছাড়া ওই এলাকার একমাত্র স্বাস্থ্য সেবাদানকারী কমিউনিটি ক্লিনিকটিও যেকোন সময় নদী গর্ভে বিলনি হয়ে যাবে।

এদিকে তীব্র নদী ভাঙনে উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের চতুরা, কালিরহাট, তৈয়বখাঁ এবং ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশাম, চরখিতাবখাঁ, মাজের চর, গতিয়াশাম ক্লিনিকপাড়া ও গতিয়াশাম মন্ডলপাড়া ৮টি গ্রামের সহ¯্রাধিক বসতভিটা সহ তৈয়বখাঁ বাজার, কালিরহাট বাজার, বুড়িরহাট বাজার, সরিষাবাড়ি বাজার, তৈয়বখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিরহাট নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২টি ইউনিয়নের ৪টি মসজিদ, ২টি মন্দির, স্থাপনা ও শতশত একর ফসলি জমি হুমকীর সম্মূখীন হয়ে পড়েছে।

প্রতিবছর তিস্তা নদী ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িযালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে গেছে। বিগত এক যুগে তিস্তা কেড়ে নিয়েছে উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের চার হাজারেরও বেশী পরিবারের বসত ভিটা ও ফসলী জমি। সর্বশান্ত এসব পরিবারের অনেকেই আজ পর্যন্ত মাথা গজার ঠাঁই পায়নি। ফলে তিস্তা পাড়ের সর্বহারা মানুষ গুলোর নানা কষ্টে দিন কাটছে । একদিকে ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো খুঁজে পাচ্ছে না কোন ঠিকানা অন্যদিকে দু:চিন্তায় দিন-রাত কাটছে হুমকীতে থাকা পরিবারগুলোর।

উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের নদী ভাঙন কবলিত গ্রাম গুলোতে ঘুরে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর দুঃখ দূর্দশার নানা চিত্র পাওয়া গেছে।

চরখিতাখাঁ গ্রামে নদী ভাঙনে হুমকীর মুখে থাকা শাহজামাল (৪৫) ও ওয়মান গনির (৬০) দাবী,‘না খায়া থাকলেও ত্রাণের আশা করি না, ভাঙ্গন থেকে মুক্তি চাই’। এসময় নদী ভাঙন কবলিত মানুষরা তিস্তার ভাঙন রোঁধে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।

চরখিতাবখাঁ গ্রামের ইউপি সদস্য মামুন মন্ডল বলেন, যেভাবে ভাঙন চলছে, ভাঙন না থামলে ২/৩দিনের মধ্যে ২শতাধিক বাড়ি সহ গ্রামটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন থাকায় আপাতত নতুন কোন প্রকল্প নেয়া সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, ৩ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গায় ভাঙন এরমধ্যে আমরা কাজ করেছি হাফ কিলোমিটার বা তারও বেশি স্থানে। বিস্তীর্ণ এলাকা ব্যাপী ভাঙন এটা প্রকল্প ছাড়া কার্যক্রম গ্রহন করা সম্ভব হচ্ছে না। #

 


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/124527 ,   Print Date & Time: Wednesday, 2 July 2025, 06:12:52 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group