• হোম > আন্তর্জাতিক > বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ঘুমধুম ও তমব্রু সীমান্ত অব্যাহত সংঘর্ষ চলছে

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ঘুমধুম ও তমব্রু সীমান্ত অব্যাহত সংঘর্ষ চলছে

  • সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:০৪
  • ৪১৭

 ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ঘুমধুম ও তমব্রু সীমান্ত এলাকায় কিছুদিন ধরে অব্যাহত সংঘর্ষ চলছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা জাগাচ্ছে। কূটকৌশলের মাধ্যমে দেশটিতে অবস্থানরত অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের পাঠাতে এই অপতৎপরতা বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে বাংলাদেশের এলাকায় গোলা পড়ার কারণে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ। সবশেষ গত রোববার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় যেকোনো ধরনের গোলার ব্যবহার করার আগে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের রীতি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে এসব গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশের সঙ্গে কোনোরকম তথ্য আদান-প্রদান করা হয়নি বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ অবস্থায় মিয়ানমারে থাকা অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশমুখী করার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকটা ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের কায়দায় বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার ওড়ানোর পাশাপাশি টানা গুলিবর্ষণ এবং মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর মধ্যে চারটি মর্টার শেল এবং অসংখ্য গুলি এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। পূর্বের মতোই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটাতে মিয়ানমারের এই কৌশল বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারে কড়া সেন্সরশিপ থাকায় সেদেশের কোনো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, বান্দরবানের স্থানীয় বাসিন্দা এবং মিয়ানমারের সংবাদপত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে, আগস্ট মাসের শুরু থেকে সেদেশের রাখাইন, তানপট্টি ও হাকা রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান বিদ্রোহী বাহিনীগুলোর লড়াই চলছে।

একদিকে যেমন রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লড়াই চলছে, অন্যদিকে গত মে মাস থেকে কায়াহ, কাইন ও চিন রাজ্যেও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এই যুদ্ধে হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমানও ব্যবহার করছে সেদেশের সামরিক বাহিনী।

এর আগে মানবিক দিক বিবেচনা করে স্থানীয় বাসিন্দারা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দিলেও এবার তাদের দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই ভিন্ন। শুধু ২০১৭ সালের আগস্ট মাসেই অন্তত ৯ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে। এখন সে সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। এবার তাই অনুপ্রবেশ প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৩ নম্বর ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের অভ্যন্তরে যুদ্ধ করে টিকে থাকুক। তাদের বাংলাদেশে জায়গা দেওয়া মানে তাদের প্রতিবন্ধী করে ফেলা।

যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান। তিনি বলেন, সীমান্তে অপরাধের মধ্যে অনুপ্রবেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি যেকোনো জায়গা দিয়ে ঘটতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে আছি, যাতে মিয়ানমারের কোনো নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, সীমান্তের ওপারে সংঘর্ষ হলেও এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, যে জায়গায় সংঘর্ষ হচ্ছে বলে বলা হচ্ছে, সেটা আমি ভালো করে চিনি। সেখানে চলাচল বেশ কঠিন। এ রকম গোলাগুলি হতে থাকলে, সীমান্তের তাহলে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে এমন এলাকায়, যেখানে প্রবেশ বা চলাচল করা কঠিন। আমি যতদূর জানি, আরাকান আর্মির সঙ্গে একসময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বোঝাপড়া থাকলেও এখন তারা মিয়ানমার আর্মির ওপর বিভিন্ন জায়গায় হামলা করছে, সেটার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/125428 ,   Print Date & Time: Tuesday, 17 June 2025, 09:45:09 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group