• হোম > বাংলাদেশ > সেতু না থাকায় ভোগান্তি ৪০ হাজার মানুষের

সেতু না থাকায় ভোগান্তি ৪০ হাজার মানুষের

  • শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৫৮
  • ৪০৯

 সেতু না থাকায় ভোগান্তি ৪০ হাজার মানুষের

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার পশ্চিম সাইতারা গ্রাম। এই গ্রামে ২০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। দূরত্ব কম হওয়ায় তাদের নিত্য যাতায়াত জেলা সদরের বুড়িরহাট বাজারসহ নানা স্থানে। কারণ উপজেলা সদর থেকে গ্রামটির দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। একইভাবে গ্রামটির আশপাশের আরও পাঁচ থেকে ছয়টি গ্রামের কিছু মানুষসহ ৪০ হাজার মানুষ প্রতিদিন জেলা সদরে যাতায়াত করেন। সমস্যা হলো, পশ্চিম সাইতারা ও বুড়িরহাটের মাঝামাঝি আত্রাই নদীতে সেতু নেই। নৌকায় যাতায়াতের ভোগান্তি তাদের নিত্যসঙ্গী।

এই এলাকার পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন আত্রাই নদী পার হয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয়। এলাকাবাসীর বহু দিনের দাবি একটি সেতুর; কিন্তু বছরের পর বছর পার হলেও সেতুটি হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে দুর্বিষহ ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

পশ্চিম সাইতারা গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী সাইদুর রহমান বলেন, ‘অনেক দিন থাকি শুনতেছি সেতু হবে হবে; কিন্তু হচ্ছে না। সেতুটি দেখে যাইতে পারলে মরিয়াও শান্তি পাইতাম। লোকেদের নদী পারাপারের অসুবিধা। ধান বাজারে নিয়া যাইতে হয়, এদিকে কোনো বাজার নাই। হাটবারের দুই দিন আগে ধান পার কইরতে হয়। রোগী নিয়ে যাওয়াও অসুবিধা। পারাপারের সমস্যার জইন্যে আমাদের কয়েকটা রোগী এই ঘাটের মধ্যে মারাও গিয়াছে। নৌকা ঘাটে অপেক্ষায় বহু টাইম লাগে।’
জানা গেল, মাত্র ৪০ মিটার প্রশস্ত আত্রাই নদী। এটি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদী থেকে এসেছে। দেড় মাস আগে বোদা উপজেলায় ভয়াবহ নৌকাডুবিতে মারা গিয়েছিল ৭১ জন। ওই ঘটনার পর থেকে নদী পারাপারে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পশ্চিম সাইতারা গ্রামটির পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি নদী। মাঝখানে প্রায় ৭ হাজার পরিবার বাস করে। এই গ্রামের মানুষকে নিত্যদিন হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল কিংবা জরুরি প্রয়োজনে নৌকায় করে নদী পার হয়ে সদরে যেতে হয়। এতে নানা ঝামেলায় পড়তে হয় তাদের। রাস্তাঘাটসহ উন্নয়ন বঞ্চিত এসব পরিবারের দীর্ঘদিনের দাবি, আত্রাই নদীর ওপর একটি সেতু তৈরির।

জানা যায়, পশ্চিম সাইতারা গ্রামের আশপাশের পূর্ব সাইতারা, বৈদেশিক পাড়া, ইন্দ্রপাড়া, রাবার ড্রাম, ডাঙ্গার পাড়া গ্রাম। এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ নৌকায় নদী পার হয়ে একই পথে জেলা সদরে যান। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০টি ইজিবাইক ও ১৫০টি ব্যাটারিচালিত ভ্যান নৌকায় পার হয়। এর পর দিনাজপুর শহরে প্রবেশ করে। গ্রামগুলো থেকে ৫ শতাধিক শিশু-কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থী নৌকায় বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে যাতায়াত করে। প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মোটরসাইকেল পার হয় নৌকায় করে। কাজের উদ্দেশে শহরে যান প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক।

দিনাজপুর জেলা থেকে এই গ্রামটিতে দ্রুত প্রবেশ করার একমাত্র উপায় নৌকা। সড়ক দিয়ে ঢুকতে হলে ঘুরতে হবে ২৩ কিলোমিটার পথ, তাও মাটির রাস্তা দিয়ে। এই রাস্তায় চার চাকার যানবাহন দূরের কথা, পশ্চিম সাইতারা গ্রামে ইজিবাইকও যেতে চায় না।

গ্রামবাসী জানান, পশ্চিম সাইতারা গ্রামে কোনোদিন অ্যাম্বুলেন্স বা চার চাকার যানবাহন প্রবেশ করেনি। রোগী নিয়ে নৌকায় পার হওয়ার সময় অনেক রোগীর মৃত্যুও হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা রোগীরা পড়েন চরম বিপাকে। এসব সমস্যার সমাধান দিতে পারে মাত্র ৪০ মিটারের একটি সেতু।

স্থানীয়রা জানান, গত জুলাই মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান মোফাজ্জল হোসেন। প্রায় ৬ মাস আগে মফিউদ্দিনের দেড় বছরের মেয়ে রাফিয়া জান্নাত অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এক বছর আগে মারা যান দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী ওয়াহেদ আলী। এর আগে নদী পার না হতে পেরে প্রাণ যায় বিরেন দাস, জগদিশ রায়সহ অনেকের।

ঘোষপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাঈম ইসলাম বলে, ‘আমার স্কুলে যেতে অনেক দেরি হয়, ক্লাস পাই না। আমরা নদীর ওপর একটি পুল চাই।’
ষাটোর্ধ্ব রবিন চন্দ্র রায় বলেন, পূর্ব সাইতারা গ্রাম অনেক অবহেলিত। ধান বিক্রি করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অসুবিধা হয়। সময় মতো বাজারে পৌঁছাতে না পারলে দাম পাওয়া যায় না। রোগীদের বহনে অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারে না।

খুর্শিদা বেগম নামে এক নারী বলেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের নিয়ে কাজ করেন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যা হয়। রাতে নৌকা কিংবা মাঝি পাওয়া যায় না। রোগী নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। নৌকার মাঝি রশিদুল ইসলাম বলেন, সেতু হোক আমরাও চাই।

সাইতারা ইউনিয়নের সদস্য রবিন্দ্র নাথ রায় বলেন, সরকারের কাছে অনুরোধ, এখানে দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ করা হোক।

চিরিরবন্দর উপজেলা প্রকৌশলী ফারুক হাসান বলেন, পশ্চিম সাইতারা ও বুড়িরহাটের মাঝামাঝি আত্রাই নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে সদর উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/129785 ,   Print Date & Time: Friday, 9 May 2025, 05:06:03 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group