• হোম > বাংলাদেশ > দেশে জ্বালানির দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই

দেশে জ্বালানির দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই

  • শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৩, ১৫:১২
  • ৪৩৭

 দেশে জ্বালানির দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই

বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ফের ৮০ ডলারের নিচে নেমেছে। শুক্রবার অপরিশোধিত তেলের মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৭৮ দশমিক ৮২ ডলার। অর্থাৎ জ্বালানির দাম ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যায়ে নেমে এসেছে। ৩ জানুয়ারি ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮৩ ডলার- গত এক মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ৭ ডিসেম্বর ব্রেন্ট ক্রুডের দর ছিল ৭৭ ডলার। অর্থাৎ গত এক মাস ধরে জ্বালানির দর ৭৭ থেকে ৮৩ ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশে এখনই তেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলছে, আরও কয়েকদিন বাজার দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দাম কমিয়ে সমন্বয় করা হলেও এর প্রভাব অর্থনীতিতে বা ভোক্তা পর্যায়ে কোনো কাজে আসে না। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে।

দেশের বাজারে তেলের দাম কমানো হবে কিনা- জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন্স) মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘যে তেলের দাম কমেছে সেটা ক্রুড অয়েল, পরিশোধিত না। আমরা অধিকাংশ পরিশোধিত তেল আমদানি করি।

বিশ্ববাজারে পরিশোধিত তেলের দামও কমেছে, তাহলে কি দেশের বাজারে দাম কমবে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দু-এক দিনের মার্কেট দর হিসাব করে তো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এই প্রাইসটা যদি স্থির থাকে বা আরও কমে তাহলে সরকার দেশের বাজারেও তেলের দাম কমাবে। তবে এখনো সরকার জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিচ্ছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তেলের বাজার খুবই অস্থিতিশীল। আজ ৮০ ডলারে নেমে এসেছে, কাল আবার তা ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে বাজারে এক ধরনের স্থিতিশীলতা এলে দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করা হবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ২০২৩ সালের বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ মন্দার কবলে পড়বে, তারপর থেকেই জ্বালানির দাম ৮৩ ডলার থেকে নামতে শুরু করে। অর্থাৎ বাজারে আবারও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

করোনার সময় অপরিশোধিত জ্বালানির দর ব্যারেলপ্রতি শূন্যের নিচে নেমে যায়। মূলত চাহিদা পড়ে যাওয়ার কারণে জ্বালানির দাম এতটা পড়ে যায়। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় যখন বিশ্বজুড়ে করোনার বিধিনিষেধ উঠে যায়, তখন থেকে জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করে। গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দাম ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

মূল বিষয় হচ্ছে, চাহিদা ও সরবরাহ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো মন্দার কবলে পড়বে; অর্থাৎ ২০২০ সালের পর আবারও দেশগুলো অর্থনৈতিক সংকোচনের মুখে পড়বে। রাশিয়ার জ্বালানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে উন্নত দেশগুলোতে জ্বালানির দাম অনেকটা বাড়তি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মান সরকার বিপুল পরিমাণে জ্বালানি ভর্তুকি দিয়েছে, তাতেও মন্দার আশঙ্কা দূর করতে পারছে না তারা। সেই সঙ্গে আছে চীনের শূন্য কোভিড নীতি, যদিও সম্প্রতি তারা শূন্য কোভিড নীতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২০২১ সালের অক্টোবরে ব্রেন্ট ক্রুডের দর ব্যারেলে ৮০ ডলার ছাড়িয়ে গেলে দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করা হয়। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন ৮০ টাকা নির্ধারণ করে। এরপর ২০২২ সালে আগস্টে দেশের বাজারে জ্বালানির দর আবারও বাড়ানো হয়। সেবার জ্বালানির দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এতে মূল্যস্ফীতির হার লাগামছাড়া হয়ে যায়, কারণ জ্বালানির দামের সঙ্গে সবকিছুর সম্পর্ক আছে।

সরকারের মন্ত্রীরা বারবারই বলেছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে দেশেও দাম সমন্বয় করা হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আমরা তেলের দাম বাড়াইনি, শুধু সমন্বয় করেছি। বিশ্ববাজারে দাম কমলে তখন দেশের বাজারে সমন্বয় করা হবে।


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/130394 ,   Print Date & Time: Friday, 9 May 2025, 11:16:55 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group