• হোম > বাংলাদেশ | বিশেষ নিউজ | রংপুর > চিরিরবন্দরে কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হুক্কা

চিরিরবন্দরে কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হুক্কা

  • শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৪৫
  • ৭০৭

---
মোঃ আব্দুস সালাম - চিরিরবন্দর- ( দিনাজপুর ) প্রতিনিধি :

কালে কালে বদলায় সমাজ। হারিয়ে যায় ঐতিহ্য। অনুরূপ, চিরিরবন্দরে কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনুসঙ্গ হুক্কা। ৫০ - ৬০ দশকেও জনপ্রিয় ধুমপানের মাধ্যম ছিল হুক্কা।
এক সময় ঘরে ঘরে হুক্কা সেবন চলতো। এখন হুক্কা আর চোখে পড়ে না। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই খাওয়া তো দূরের কথা চোখেই দেখেনি হুক্কা। হুক্কার জায়গা দখল করে নিয়েছে বিড়ি, সিগারেটসহ অন্যন্য মাদকদ্রব্য। বর্তমান প্রজন্মের জন্য হুক্কা একটি আশ্চর্য বিষয়। এদিকে বর্তমানে বিভিন্ন মানুষের কাছে হুক্কা থাকলেও এর উপাদানগুলো বাজারে না পাওয়ার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে হুক্কা সেবন ছেড়ে দিয়েছে।
এক সময় কৃষক শ্রমিক বাড়ীর ওঠোনে সকালে ও বিকালে কাজের ফাঁকে আয়েশি ভঙ্গিতে এক ছিলিম তামাকের সাথে নারিকেলের আশে আগুন ধরিয়ে তা ছিলিমে দিয়ে পরমানন্দে হুক্কা টানতো।
এতে কৃষকের ক্লান্তি কেটে পরিতৃপ্ত হতো। জমিদার জোড়দার ও গ্রামের মোড়লরা নানা ভাবে তামাক তৈরী করে হুক্কায় টান দিয়ে পরম আনন্দে তৃপ্তির স্বাদ নিত।
অধিকাংশ শ্রমিকরা নিজের ক্ষেতের তামাক শুকিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে তাতে নালী মিশিয়ে ছিলিমে করে ধুমপান করতো।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার পুনটি ইউনিয়নে গুচ্ছ গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান , তিনি একটানা ৪০ বছর ধরে হুক্কা দিয়ে ধুমপান করেন। তার সাথেই আলাপকালে জানা গেলো ঐতিহ্যবাহী হুক্কার আদ্যোপান্ত অনেক গল্প।
সমাজের বিত্তবান পরিবারের লোকরাও নানা সাজে তামাক তৈরি করে হুক্কায় নল লাগিয়ে পরম আনন্দে তৃপ্তির আস্বাদ নিতো। এটিই ছিল সে সময়কার আনন্দ বিনোদনের অংশ। এখন আর তা দেখা যায় না। অর্ধযুগ আগেও আবহমান বাংলার গ্রামগঞ্জে ধূমপায়ীরা হুক্কার মাধ্যমে তামাকপানে অভ্যস্ত ছিল।
তামাক পাতাকে ছোট করে কেটে চিটাগুড় মিশিয়ে তৈরি হতো হুক্কার প্রধান উপাদান। হুক্কা তৈরির উপাদানগুলোর জন্য সে সময় তামাক পান-সুপারিওয়ালারা বাজারে বিক্রি করতো। এখন আর এগুলো বিক্রি করতে চোখে পড়ে না।
হুক্কা সেবন করতে খরচও কিন্তু কম নয়। জানা গেলো, এক সময় স্থানীয় বাজারে ‘তওমিটা’ পাওয়া গেলেও এখন আর পাওয়া যায় না। এখন এক কেজি তওমিটা এখন ১০০ টাকা। তাও এলাকার একটি নির্দিষ্ট দোকান থেকে ‘তওমিটা’ আনতে হয়। আবার দৈনিক সকালে হুক্কার পানি বদলাতে হয়। আর হুক্কার টিক্কা তৈরি করতে হয় শিম গাছের লতাকে পুড়িয়ে ও ভাতের মাড় দিয়ে।
বিড়ি-সিগারেট থেকে হুক্কা সেবন ভালো কি না, জানতে চাইলে তিনি জানান, হুক্কার স্বাদই আলাদা। তারমতে হুক্কা সেবন করলে পেটে ভালো লাগে। বিড়ি-সিগারেট থেকে খরচ অনেক বেশি পড়ে।
হুক্কা টানার ফাঁকে একবেলা আলাপকালে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আগে গ্রামের সবাই হুক্কা খাইতো। এখন হুক্কা ছেড়ে বিড়ি সিগারেট ও গাঁজা খায়। এই গ্রামে এখন আমি একাই হুক্কা খাই। হুক্কার নেশায় যারা অভ্যস্থ তারা হুক্কা ছাড়া থাকতে পারবে না।’

গর গর শব্দে হুক্কায় আয়েশি টানের ফাঁকে ‘ আমার হুক্কা আমি নিজেই তৈরী করি। সকালে ঘুম থেকে ওঠে হুক্কার পানি বদলায়ে না খাইলে আমার পেট পরিস্কার হয় না। ‘
কি ভাবে হুক্কা তৈরী করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝুনা নারিকেলের একটা মালাই দুটো ফুটো করে তার উপর কারুকার্য করা একটি কাঠের নল তৈরী করে তাতে মাটির তৈরী ছিলিম বা কলকি দিয়ে নারিকেলের মালাই ভর্তি পানি ভরালেই হুক্কা হয়ে যায়।

এখন সেই আয়েশি হুক্কার যুগ আর নাই, গ্রামীন জনপদে এখন পাওয়া যাচ্ছে মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ নানান জাতের মাদক।’


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/131605 ,   Print Date & Time: Tuesday, 17 June 2025, 02:58:03 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group