• হোম > খুলনা | বাংলাদেশ | বিশেষ নিউজ | ব্যবসা বাণিজ্য > হাত বদলেই সবজির দাম দ্বিগুণ!

হাত বদলেই সবজির দাম দ্বিগুণ!

  • মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:০১
  • ২১৯৮

ছবি : সংগৃহীত।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
সকাল ৬টা। রাতের অন্ধকার কেটে গেলেও কুয়াশার সাদা আবরণে ঢেকে আছে চারপাশ। দৃষ্টিসীমাও ক্ষীণ। সাথে কনকনে হাওয়া, হাড়কাঁপানো শীত। কিন্তু কৃষকের গায়ে হালকা কাপড়। ভ্যানসহ স্থানীয় বিভিন্ন বাহনে নিয়ে আসা সবজি নামাতে যুদ্ধ করছেন তারা। আরো ভোরে আরেক দফা যুদ্ধ করে এসেছেন ফসলের মাঠে। বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে করে ক্ষেত থেকে তুলেছেন ফসল। এ কারণে এই শীতল আবেশ তাদের কাবু করতে পারছে না। এটি সাত সকালে কুষ্টিয়া সদরের বিত্তিপাড়া বাজারের চিত্র। হরেক রকমের সবজি নিয়ে এসেছেন কৃষক। তবে এখন বেগুনই বেশি।

এখানে কৃষক পর্যায় থেকে কিনে নেয়া সবজি কয়েক কিলোমিটার দূরের শহরে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। রাজধানী বা অন্য বড় শহরে গিয়ে বাড়ছে আরো বেশি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষক উৎপাদন করলেও কয়েক স্তরের মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা নিয়ে যাচ্ছে লাভের টাকা। কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তার জন্যও বেড়ে যাচ্ছে দাম। মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে কৃষি বিভাগ বায়ার চ্যানেল ও কৃষি বিপণন বিভাগ বিপণন দল গঠন করার কথা বলছে।

কুষ্টিয়া শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরের বাজার বিত্তিপাড়া। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে লাগোয়া এ বাজার। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম সবজির হাব এটি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মহাসড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করছে ভারী ভারী দূরপাল্লার যানবাহন। এর ফাঁকে সড়কের ওপর থেকে শুরু হয়ে বাজার নেমে গেছে পার্শ্ব রাস্তা বরাবর। সকালে এখানে মৌমাছির মতো কৃষকের ভিড়। সঙ্গে আছে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের নিয়োগকৃত ক্রেতাদল। তারা কিনে সবজি তাদের নির্ধারিত ফাঁকা জায়গায় ঢেলে রাখছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবজি বড় বড় স্তুপে পরিণত হচ্ছে। আর কৃষকরা নগদ টাকা নিয়েও মলিন মুখে চলে যাচ্ছেন।
হাটে কৃষকরা সাধারণ মানের বেগুন বেঁচতে পারছেন ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। আর ভালমানের কাটা বেগুনের দাম ওঠে ২৮টাকা পর্যন্ত। লাউ একটি ১৫ টাকা, সিমের কেজি ২২ থেকে ২৫ টাকা, মূলা ৮ টাকা, মরিচ ২৫ আর ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি। আরো হরেক রকমের সবজি নিয়ে এসেছেন কৃষকরা।

এখান থেকে কেনা সবজি বস্তায় ভরে ট্রাকে করে চলে যাচ্ছে ঢাকায়। কিছু যাচ্ছে কুষ্টিয়াসহ আশপাশের শহরে। ১৪ কিলোমিটার দূরের কুষ্টিয়া শহরেই এই সবজি আড়তদারের আরেক হাত ঘুরে সকালেই বাজারে উঠছে। বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ বা তারও বেশি দরে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, লাউ একটি ৪০টাকা, সিম ৬০টাকা কেজি, মূলা ৩০ টাকা কেজি, মরিচ ৬০ টাকা কেজি, আর ফুলকপির কেজি কমপক্ষে ৬০ টাকা।

বিত্তিপাড়া বাজারে বেগুন বিক্রি করা কৃষক সোহেল হোসেন বলেন, বীজ, সার-কীটনাশকের যে দাম সেই সঙ্গে ফসল ফলাতে যে পরিমাণ খাটুনি হয় তাতে এই দামে পোষায় না। কিছুদিন আগে ভাল দাম ছিলো। সবজি বেশি ওঠায় দাম কমে গেছে।

ব্যাপারী আসলাম মণ্ডল বলেন, কাঁচামালের দাম নির্ভর করে আমাদনির ওপর। কৃষক যেদিন বেশি মাল নিয়ে আসেন সেদিন দাম কমে যায়। আমরা চেষ্টা করি যতোটা কমে কেনা যায়। কারণ আমাদের লেবার ও ক্যারিং খরচ আছে। সেগুলো যোগ করে তারপওর লাভ ধরে আড়তে বেচতে হয়। সবদিন যে লাভ করা যায় তা কিন্তু না।

কুষ্টিয়া পৌর বাজারের খুচরা বিক্রেতা আলামিন বলেন, ফড়িয়া, আড়ৎ আর খুচরা প্রতি ধাপে কেজিতে কমপক্ষে ৫ টাকা লাভ রাখা হয়, তারপর খরচতো আছেই। দাম দ্বিগুণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

তারই সামনে বাজার করতে আসা মাসুদ রহমান বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীর সংখ্যা ও তাদের লাভ কমানো গেলে ভোক্তা ও উৎপাদক উভয় পক্ষই লাভবান হতে পারতো।

একই কথা কুষ্টিয়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খানের। তিনি বলেন, মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে বিভিন্ন এলাকায় কৃষি বিপণন হাব করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। আর কৃষক পর্যায় থেকে সরাসরি বিপণনের জন্য গঠন করা হচ্ছে কৃষক দল। এভাবে কৃষকের সঙ্গে ভোক্তার সরাসরি সংযোগ ঘটানো গেলে কৃষক যেমন ভাল দাম পাবেন তেমনি তুলনামূলক কম দামে কিনতে পারবেন ভোক্তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এবছর আগাম ও শীতকালীল সবজি মিলিয়ে জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছে। তিনি বলেন, অন্যান্য নিত্যপণ্য যেমন দেশের সবজায়গায় একই দাম। তেমনভাবে কৃষি পণ্যে যদি বায়ার চ্যানেল সৃষ্টি করা যায় তাহলে কৃষকরা এই বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এই চ্যানেলে নির্দিষ্ট কৃষকদের জন্য থাকবে নির্দিষ্ট বায়ার গ্রুপ।


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/133244 ,   Print Date & Time: Tuesday, 1 July 2025, 06:52:03 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group