• হোম > ঢাকা | বাংলাদেশ | বিশেষ নিউজ > চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা পারের বসতিরা গত তিন দিনের তীব্র শীতে বিপর্যস্ত

চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা পারের বসতিরা গত তিন দিনের তীব্র শীতে বিপর্যস্ত

  • মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৪, ১২:১৭
  • ২৮৫

---

ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি-

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা পারের বসতিরা গত তিন দিনের তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলার ভাঙন কবলিতরা পদ্মা পারের বিভিন্ন বেড়িবাঁধ, ও উন্মুক্ত ফসলী মাঠের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিবারগুলো তুষারাচ্ছন্ন বাতাস আর হাড় কাপাঁনো শৈত্য প্রবাহে জবুথবু হয়ে পড়েছে। এসব শীতার্ত পরিবারে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদী পশুর মধ্যে দেখা দিচ্ছে শীতজনিত রোগ বালাই। তীব্র শীতের কবল থেকে রক্ষা পেতে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক দিন মজুররা। ফলে কর্মহীন জীবন কাটাচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো। এদের মধ্যে বেশীরভাগ শ্রমজীবি, মজুর ও জেলে পরিবার রয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে ইরি ও বোরা ধান রোপনের ধুম পড়েছে। তাই ধান রোপনের কাজগুলো কাদা পানির বলে উপজেলার বেশীরভাগ বৃদ্ধ কৃষক ও শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সেই সাথে শীতে কাবু পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদী পশুর মধ্যে দেখা দিয়েছে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ।

সোমবার উপজেলা পদ্মা নদীর চরশালেপুর গ্রামের ছগীর বিশ্বাস (৫৫) বলেন, “তীব্র শীতে পদ্মা পারের প্রায় সব গরু ছাগল রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে, এ ছাড়া বৃদ্ধ ও শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে”। জানা যায়, পদ্মার পাড় ঘেষে তীব্র শৈত্য প্রবাহ ও হাড়ধরা শীতে কর্মহীন অবস্থায় অনেকের খেয়ে না খেয়ে খড়কুটো জ¦ালিয়ে দিন কাটাচ্ছে। অভাব অনটনে অনেকে একটি গরম কাপড়ও কিনতে পারে নাই। তাই ছোন-বনের কুড়ে ঘরে রাতের বেলায় নারী শিশু ও বৃদ্ধরা জটলাবদ্ধ হয়ে রাত যাপন করছে।

সোমবার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হক টিটু জানান,“ দুস্থ পরিবারে শীতবস্ত্র বিতরনের জন্য এ পর্যন্ত ইউপি চেয়ারম্যানদের হাতে ১৬৪০ পিচ কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানরা খুব শীগ্রই শীতার্ত পরিবারের মাঝে এসব কম্বল বিতরন করবেন”। সোমবার সরেজমিনে ঘুরলে সদর ইউনিনের বালিয়া ডাঙ্গী গ্রামের জেলখানা সংলগ্ন বেড়িবাঁধ সড়কে বসবাসরত প্রতিবন্ধী মজনু সেক (৫০) জানায়, “ ক’দিন আগে অফিসাররা একটি কম্বল দিছে, হাড়ধরা শীতে একটি কম্বলে ও্যাঁম লাগে না। সে আরও জানায় দুপুরে একটু রোদ্রু পাইয়া ভালো লাগছিল আবার কুঁয়াশায় ঘিরে গেল”। আরেক অসহায় কুসুম বালা জানায়, “ তার স্বামী করিম বেপারী (৫৫) হাপাঁনী রুগী। শীত বাড়ার ফলে ক’দিন ধইর‌্যা কামলা দিতে পারে নাই, তাই ঘরে রাখা কালাইয়ের ডাল বাইট্যা রাতের খাবারের জন্য চাপড়ী বানাচ্ছি”। একই দিন গাজীরটেক ইউনিয়নের বিন্দু ডাঙ্গী গ্রামের লক্ষী রানী (৪৮) জানায়, “ তার স্বামী চিত্ত হালদার (৬০) পদ্মা নদীতে মাছ ধরে। গত ক’দিন ধরে তীব্র শীতের কবলে সে নদীতে যেতে পারে নাই, তাই তার পরিবার ধার দেনা করে খেয়ে না খেয়ে কোনো মতে দিন কাটাচ্ছে”। স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার ভাঙন কবলিত পদ্মা পারের বসতিদের মধ্যে সদর ইউনিয়নের ফাজিলখার ডাঙ্গী, বালিয়া ডাঙ্গী ও এমপি ডাঙ্গী গ্রামের বেড়িবাঁধ, হাজীডাঙ্গী, শেখের ডাঙ্গী, টিলারচর, জাকেরের সুরা গ্রাম মিলে প্রায় দেড় হাজার পরিবার, গাজীরটেক ইউনিয়নের চর অমরাপুর, চর হোসেনপুর, জয়দেব সরকারের ডাঙ্গী বেড়িবাঁধ, ওকেল মাতুব্বরের ডাঙ্গী, বিন্দু ডাঙ্গী, মধু ফকিরের ডাঙ্গী ও আঃ রহমান প্রামানিকের ডাঙ্গী গ্রামের প্রায় ২ হাজার পরিবার, চরহরিরামপুর ইউনিয়নের আরজখার ডাঙ্গী গ্রাম, চরসালেপুর, ছমির বেপারী ডাঙ্গী, আমিনখার ডাঙ্গী ও নমুর ছ্যাম গ্রামে পদ্মার এলাকায় রয়েছে আরও প্রায় এক হাজার। এচাড়া চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের চর মঈনূট পাকা রাস্তার দু’ধার, বাদশা মোল্যার ডাঙ্গী, চর মির্জাপুর, চর কালিকিনিপুর গ্রামের প্রায় ৫শ’ পরিবার হাড় কাপাঁনো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/134354 ,   Print Date & Time: Tuesday, 17 June 2025, 08:02:19 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group