• হোম > ঢাকা | বাংলাদেশ | বিশেষ নিউজ > চরভদ্রাসনে আড়ৎদারী সিন্ডিকেট মাছের দাম আকাশচুম্বি

চরভদ্রাসনে আড়ৎদারী সিন্ডিকেট মাছের দাম আকাশচুম্বি

  • মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৪, ১১:০৭
  • ৮৭২

---

ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি-

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদী তীরবর্তি এলাকায় বিভিন্ন বাজারের আড়ৎদারী সিন্ডিকেট মাছের দাম আকাশচুম্বি করে রেখেছে। দীর্ঘকাল ধরে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উপজেলায় আড়ৎদারদের সিন্ডিকেটের কারনে সকল প্রজাতির মাছ প্রায় দ্বিগুন মূল্যে বিক্রি হলেও কারো মাথা ব্যাথা নেই। এতে উপজেলার হাতে গোনা অর্ধশত আড়ৎ মালিক লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন লাখো জনগোষ্ঠী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীর অপর পারে চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চর মঈনট ঘাটের পাশে রয়েছে উপজেলায় ভোর রাতের সবচেয়ে বড় মাছ বাজার। উক্ত ভোর রাতের মাছ বাজারে রয়েছে অন্ততঃ ত্রিশটি আড়ৎদারী ব্যাবসা। এছাড়া উপজেলা সদর বাজারে তিনটি মাছের আড়ৎ, চরহাজীগঞ্জ বাজারে তিনটি, জাকেরের সুরা নামক বাজারে চারটি, আরজখার ডাঙ্গী গ্রামের বাজারে তিনটি, আঃ হাই খান হাটে চারটি, মাসুদখার হাটে তিনটি ও নতুন ডাঙ্গী বাজারে রয়েছে আরও দু’টি আড়ৎদারী ব্যাবসা।
সূত্র জানায়, প্রতিটি আড়তের অধীনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ডেকে আনা হয়েছে প্রয়োজন সংখ্যক জেলে। এসব জেলেদের লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে আড়ৎদাররা তৈরী করে দিচ্ছেন বিশাল আকৃতির বেড় জাল, কারেন্ট জাল ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। প্রতিটি আড়তের নির্দিষ্ট জেলেরা দিনরাত ৫/৭টি করে ট্রলার, কারেন্ট জাল ও বেড়জাল দিয়ে পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করে ভোর রাতে নিয়ে যায় নিজস্ব আড়তে।

সেখানে আকাশচুম্বি দরে বিক্রিত মাছের ৪০ শতভাগ অর্থ নেয় আড়ৎ মালিক এবং ৬০ শতভাগ অর্থ পায় জেলেগোষ্ঠী। উপজেলার প্রতিটি মাছ বাজারের নিয়ন্ত্রক হচ্ছেন আড়ৎদাররা। তারা বেশী লাভবান হওয়ার জন্য সিন্ডিকেট করে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ২/৩ গুন চড়ামূল্যে মাছ বিক্রি করে চলেছেন। আর অতিরিক্ত দামের কারনে উপজেলার লাখো জনগোষ্ঠী সন্তান সন্ততির মুখে তুলে দিতে পারছেন না একবেলা মাছভাত।

খোজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি মাছ বাজারের আড়ৎদাররা এলাকার প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক ছাত্রছায়ায় থেকে প্রতিদিন জেলেদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিক্রিত মাছের ৪০ শতভাগ অর্থের লাখ লাখ টাকা। মাছ বাজারের আড়ৎদারদের দৌরাত্ন নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন আইন-শৃংঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা, বাজার মনিটর কমিটির সভায় বার বার উন্থাপন হয়েছে কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় নাই।

এ ব্যাপারে সোমবার উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আসলে আড়ৎদারী ব্যাবসার উপর হস্তক্ষেপ করা আমাদের কোনো নীতিমালায় নাই। তবে অতিরিক্ত মূল্যে মাছ বিক্রি ও পদ্মায় অবৈধ জাল ব্যাবহারের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান করতে পারি”। একই দিন উপজেলার চর মঈনট ঘাটের এক আড়ৎদার মোরাদ হোসেন মৃধা বলেন, “ অত্র চরাঞ্চলে মাছের আড়ৎদারী ব্যাবসা করতে লাইসেন্সের দরকার হয় না তবে মাছ বাজারে নির্দিষ্ট ঘর ও লাখ লাখ টাকা খরচ করে জেলেদের নৌকা জাল দিতে হয় এবং পদ্মায় জেলেদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আমাদের দেখতে হয়”।
আর চিত্ত হলদার (৭০) নামক এক জেলে বলেন, “ বাপুরে এই বয়সে সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে দুটো ভাতের জন্য আমরা সাতজন জেলে দু’টি ট্রলারযোগে বেড়জাল দিয়ে পদ্মা নদীতে মাছ ধরছি। এই শীতে রাতভর খেটে ভোরে বিক্রিত মাছের যে ৬০ শতভাগ টাকা পাই তা দিয়ে আমগো ক্ষুরাকই হয় না। আড়ৎদারদের ৪০ভাগ অর্থ প্রদান ছাড়াও বাজারে মাছ উঠানোর পর খাজনার জন্য মাছ, ঝাড়-দারের জন্য মাছ ও তোলা মাছ আলাদাভাবে আড়তে রেখে দেওয়া হয় বলেও উক্ত জেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/134696 ,   Print Date & Time: Tuesday, 17 June 2025, 04:57:43 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group