• হোম > খুলনা | বাংলাদেশ > বেনাপোলে লিটন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এখনো স্বমূর্তিতে

বেনাপোলে লিটন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এখনো স্বমূর্তিতে

  • রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৭:১৮
  • ৩৫৬

---

ইয়ানূর রহমান, যশোর প্রতিনিধি :

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেনাপোলে হট্টগোল করার হোতা লিটন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এখনো এলাকায় স্বমূর্তিতে বিচরণ করায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ভোট কেন্দ্রে সেদিনের সেই অস্ত্রের ঝনঝনানি, মুহুর্মূহু বোমা বিস্ফোরণ আর চাকু মারার দৃশ্য মনে উঠতেই জীবন হারানোর শঙ্কায় আঁতকে ওঠে এলাকাবাসী। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পোর্ট থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয় সে সময়। অভিযোগের সাথে বারবার ফোনালাপ ও সিসি ফুটেজের বিষয় যুক্ত করা হয়। কিন্তু অনেকে এখনো গ্রেফতার হয়নি।

বিচারের আশায় বিভিন্ন মহলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বেনাপোল ওয়ার্ডের ছুরিকাঘাতপ্রাপ্ত, শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিতসহ অসংখ্য আঘাতপ্রাপ্ত পরিবারের সদস্যরা।

বেনাপোল কলেজ পাড়ার আবু সাঈদ অনিকের দেখা একটি হৃদয় বিদারক ঘটনার বর্ণনা ও বেনাপোল পোর্ট থানায় এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেসহ বেনাপোল ওয়ার্ডের বাসিন্দা ‘আওয়ামী লীগ নেতা’ মহাতাব উদ্দিনের ছেলে শাওন হোসেন (২৬), জয়নালের ছেলে উজ্জল হোসেন (২৬) ও আব্দুল সামাদের ছেলে জুয়েল (২৩) সহ কয়েকজন নৌকা প্রতীকের কর্মী হিসেবে ভোটারদের মাঝে ভোটার স্লিপ প্রদানে সহযোগিতা করছিলো। যা মেনে নিতে পারেনি ট্রাক প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন। ক্ষমতার দাপটে তিনি তার পোষ্য সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দেন শার্শা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ন্যায় নিজ জন্মস্থান বেনাপোল ওয়ার্ডের প্রতিবেশী নিরস্ত্র নৌকা প্রতীকের কর্মীদের উপর।

বেনাপোলে এ বর্বরোচিত হামলায় লিটনের পোষ্য সন্ত্রাসীরা অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দলবদ্ধভাবে এসে তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ তাদের উপর তাণ্ডবলীলা চালায়।

এজাহারের বিবরণে জানা যায়, জীম নামের ৪ নম্বর আসামি নৌকা প্রতীকের কর্মী অনিককে খুন করার উদ্দেশ্যে তার হাতে থাকা হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে জখম করে এবং সে মাটিতে পড়ে গেলে ইমরান নামের ৩ নম্বর আসামি তার হাতে থাকা
লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারপিট করে।

একই কাজে লিপ্ত হাসান নামের ৭ নম্বর আসামি তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে শাওনকে এবং ফয়সাল নামের ৫ নং আসামি তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে উজ্জলকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। মামুন নামের ৬ নম্বর আসামি তার হাতে থাকা দা দিয়ে
শাওনের মাথার মাঝে আঘাত করে। ইকবল নামের ১ নম্বর আসামি তার হাতে থাকা বারমিজ চাকু দিয়ে জুয়েলের পেটের বাম পাশে আঘাত করে। একই খেলায় নাসির নামের ২ নম্বর আসামি ও ইমরান নামের ৩নম্বর আসামি তাদের হাতে থাকা দেশীয়
অস্ত্র দা’য়ের উল্টো পিঠ দিয়ে তাদেরকে আঘাত করে। তবে, এজাহার নামীয় ৯ নম্বর আসামি আব্দুল ওয়াহিদ দুদুর হুকুমে এজাহারের অন্যান্য আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন তাদেরকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। এ সময় আহতরা বাঁচাও
বাঁচাও বলে চিৎকার করলে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে প্রেরণ করে।

পরে, এলাকাবাসীর কাছে সংবাদ আসে’ জুয়েলের পেটে ছুরি মারায় তার নাড়ি-ভুড়ি বেরিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। রাখে আল্লাহ’ মারে কে! এ যাত্রায় নৌকার প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত ও টানা ৪ বারের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শেখ আফিল উদ্দিনের সার্বিক দেখভাল, চেষ্টা ও নিজ অর্থায়নে আহতদের সুচিকিৎসায় মায়ের ছেলেরা ঘরে ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

এজাহারের ১নম্বর আসামি ইকবল হোসেন ও ২ নম্বর আসামি নাসির উদ্দিন জামিন বাদেই কোন ক্ষমতার উৎসে এলাকায় স্বদর্পে চলাফেরা করছে তা নিয়ে হতাশ এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা পরিষদের মাসিকসভা ও আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে সমন্বয়ক “উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু নিরপেক্ষতা বজায় রাখাসহ সন্ত্রাসী আটক ও অস্ত্র উদ্ধারে বেনাপোল পোর্ট থানার পুলিশকে তাগিদ দিলেও অদ্যবধি তা আমলে আসেনি।

তবে বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন ভক্ত জানান, এ ঘটনায় অজ্ঞাত এক আসামিকে আটক করা হয়েছে। এজাহারের ২ জন পলাতক রয়েছে। বাকিরা আদালত থেকে জামিনে আছে। পলাতকদের আটকের বিষয়ে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, এ ঘটনায় ১৩ জনকে উল্লেখসহ ৫ থেকে ৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

তারা হলো বেনাপোল ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে ইকবাল হোসেন (২৫), বাবলুর ছেলে নাসির (৩২) ও মোঃ ইমরান (২৭), মুকুলের ছেলে জীম (২২), ও ফয়সাল (৩০), মুজিবরের ছেলে মামুন (৫৮), মৃত আব্দুল মতিন টেনার ছেলে হাসান (৩৩), নারায়নপুরের কালামের ছেলে সোহেল (৩০), বেনাপোল ওয়ার্ডেরমৃত মোহাম্মাদ উল্লাহর ছেলে আব্দুল ওহিদ দুদু (৬৫), মৃত আব্দুল মতিন টেনার ছেলে মিজানুর রহমান (৪৫), নায়ায়নপুর কলেজপাড়া মৃত বাবুর ছেলে লিটন (২৮), নারায়নপুর কেলেরকান্দার কলমের ছেলে বাদশা (২০) ও মোরশেদের ছেলে জিল্লুর রহমান (২৬) সহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন।

বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু জানান, বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারি আশরাফুল আলম লিটন জয়লাভ করতে মরিয়া হয়ে এ
বর্বরোচিত হামলার নির্দেশ দেন। যা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি জানান, লিটন একজন খলনায়ক। বেনাপোল পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন সময় থেকে সীমান্তের ত্রাস, মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালানসহ বহু অপকর্ম সিন্ডিকেটের সক্রিয় প্রধান হয়ে বিচরণ করেছে। এ বারের জাতীয় নির্বাচনে তার স্বমূর্তির বিষ্ফোরণ ঘটেছে। তার মামাতো ভাই তনিসহ পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন অপকর্ম পরিচালনা করে থাকে।


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/134936 ,   Print Date & Time: Monday, 1 September 2025, 08:08:56 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group