• হোম > বাংলাদেশ | বিশেষ নিউজ | রংপুর > ব্রহ্মপুত্র নদ শুষ্ক মৌসুমে মরা কঙ্কাল

ব্রহ্মপুত্র নদ শুষ্ক মৌসুমে মরা কঙ্কাল

  • রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪, ১৫:৩৫
  • ৮৭৯

---

গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি:

আপন শক্তিতে বলিয়ান বর্ষায় উত্তরের পথ-প্রান্তর লন্ডভন্ড করে ছুটে চলে ব্রহ্মপুত্র নদ। তবে সেই নদের শুষ্ক মৌসুমে এসে হয়েছে মরা কঙ্কাল। অসংখ্য বালুচরে নৌ-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নির্ভর ৭০ ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্রের এ রূপ কোনভাবেই বর্ষার সঙ্গে মেলে না। এখন বেশ শান্ত-সুবোধ হলেও ঢেউয়ের পর ঢেউয়ের আঘাতে গরিব কৃষকের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেয় প্রতি বর্ষায়। শুধু এ মৌসুমে নয়, কয়েকবছর ধরে বর্ষাতেই কমছে পানির পরিমাণ।

২০২২ সালে বর্ষায় সর্বোচ্চ প্রবাহ ছিলো ১ লক্ষ ২ হাজার ৫৩৫ ঘনমিটার। পরের বছর সেপ্টেম্বরে নেমে আসে ৪৩ হাজার ২৬৬ ঘনমিটারে। আর শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহের পরিমাণ থাকছে মাত্র ৩ হাজার কিউসেকের কাছাকাছি। এখন বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে ধু-ধু বালুচরে ঢাকা যেন মরু প্রান্তর। অসংখ্য মানুষের জীবন-জীবিকায় টান পড়েছে।

নজরুল ইসলাম বলেন, এখনকার চেয়ে আগে দ্বিগুণ মাছ ছিলো। এখন মাছ কম, আর আগের নদীও নাই। সব শুকিয়ে গেছে, নদী এখন বালুচর। আর মাছ কমে যাওয়ায় আমাদের কর্মও কমে গেছে। তলায় ভরাট হওয়ার প্রভাব পড়ছে দু’কূলে। বছর বছর বর্ষায় তীর ভেঙ্গে বাড়ছে প্রস্থ। দেশে প্রবেশের পর কুড়িগ্রাম অংশে এর প্রস্থ এখন ৮ থেকে ২০ কিলোমিটার। গাইবান্ধা অংশে ১২ থেকে ১৭ কিলোমিটার যমুনা নাম ধারণ করে বগুড়ায় প্রবেশের পর ১২ থেকে ১৫ আর সিরাজগঞ্জে প্রস্থ ঠেকেছে ১২ থেকে ১৩ কিলোমিটারে। উজান থেকে বহন করে আনা বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন টন পলির একটা বড় অংশ বৃহত্তম এ নদের তলদেশে জমছে। ফলে ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে জেগে উঠছে এমন অসংখ্য চর-দ্বীপচর। শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সংকট আর এসব চর জেলেদের মতো মাঝিদেরও গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে।

বালাসি ঘাট নৌ-মালিক সমিতির সভাপতি লিটন মিয়া বলেন, প্রতিনিয়ত নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। গত একমাসে তো আরও বেশি কমেছে। আগে নদীপথে মালামাল আসতো, এখন কম আসছে। আর ট্রাকের মালামাল এ ঘাটে প্রবেশ করে না। এখনকার শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছে। নৌকা মাঝি লালু মিয়া বলেন,আমাদের আয় নেই. এখন যাত্রীও কমে গেছে। তারপরও এভাবেই চলতে হচ্ছে। এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতির নির্মাণ পর্বে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের এ হাল কেন? অভিযোগ রয়েছে, কখনো ঘোষণা দিয়ে আবার কখনো ঘোষণা ছাড়াই যে যার মতো বাঁধের মালা পরিয়ে পানি প্রত্যাহার করছে উজানের দেশ চীন ও ভারত।

নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতা মনজুর আলম মিঠু বলেন, নদীর যে করুণ দশা দেখা যাচ্ছে, এর পেছনে তো কারণ রয়েছে। আর উজান থেকে পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে, যে কারণে নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রবাহের দিক থেকে গঙ্গা, তিস্তাসহ বাকি ৫৩টি নদীর চেয়েও ব্রহ্মপুত্রের ভাগ বেশি। সারা বছরের গড় হিসাবে, সীমান্তের বাইরে থেকে যে প্রবাহ বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তার ৬৫ শতাংশ একাই বহন করে ব্রহ্মপুত্র। শুকনো মৌসুমেও দেশের নদী ব্যবস্থায় ব্রহ্মপুত্র দিয়ে কমবেশি ৭৫ শতাংশ পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। অন্যদিকে কৃষিপ্রধান উত্তরবঙ্গে প্রতি বছর সেচ কাজে যে মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হয়, তার একটা বড় অংশ বর্ষায় পুনর্ভরণ ঘটায় ব্রহ্মপুত্র। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ইয়ারলুং সাংপো তথা ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বাস করে চীনের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। ভারতের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ আর ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষের বাস। অন্যদিকে ভূখন্ডের দিক থেকে চীনের মোট আয়তনের ৩ শতাংশ, ভারতের মোট আয়তনের ৬ শতাংশ আর বাংলাদেশের মোট আয়তনের ২৭শতাংশ জুড়ে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অবস্থান।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, চরগুলো পর্যায়ক্রমে যদি অপসারণ করা না হয় তাহলে বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙন দেখা দিতে পারে। এজন্য প্রতিনিয়ত ড্রেজিং করতে হবে। নদী গবেষক প্রফেসর ড. মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, যমুনা নদীর দুই পাড় বেঁধে দিয়ে যদি পরিকল্পিতভাবে খনন করা যায় তাহলে আমাদের জিডিপি প্রায় দুই শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, আমাদের নদীগুলো যদি সুন্দরভাবে উদ্ধার করতে পারি তাহলে আমাদের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। কম খরচে পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে।


This page has been printed from Daily Jubokantho - https://www.jubokantho.com/135287 ,   Print Date & Time: Thursday, 3 July 2025, 09:36:08 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 SAASCO Group