কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি:
‘আট হাজার টাকা খরচ করে নদীতে মাছ শিকারে নেমেছি। যা মাছ পেয়েছি, মাত্র তিন হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছি। পাঁচ হাজার টাকাই লোকসান।’
শনিবার (৩ মে) বিকেল ৪টা দিকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার লুধুয়া মাছঘাটের জেলে মো. সবুজ আক্ষেপ করে কথাগুলো বললেন।
টানা দুই মাসের জাটকা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শেষ হয়েছে ৩০ এপ্রিল মধ্যরাতে। এরপর থেকেই মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে নেমেছে জেলেরা। কিন্তু জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ছে না। নদীতে ইলিশ নেই বললেই চলে। তবে জেলেদের জালে বিভিন্ন মাছের পোনা ধরা পড়তে দেখা গেছে। তাও আকারে একেবারে ছোট।
কমলনগরের লুধুয়া মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে একেবারে নিরবতা। মাছ বেচাবিক্রির কোন হাকডাক নেই। যেখানে অভিযান শেষ হওয়ার পর মাছঘাটগুলোতে জমজমাট পরিবেশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘাটে একেবারে ছোট আকারে পোয়া, পাঙাশ, ইলিশের পোনা (চাপিলা) বিক্রি হতে দেখা গেছে। বড় মাছ ধরা না পড়ার পেছনে পোনা মাছ শিকারকে দায়ি করেছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে দেদারসে মাছ শিকার করতে পেরেছে জেলেরা। ফলে এবারের জাটকা সংরক্ষণ অভিযান ছিল অনেকটা ‘ঢিলেঢালা’।
লুধুয়া মাছঘাটের জেলে মো. সবুজ বলেন, আমরা নৌকাতে ৬ জন জেলে মাছ শিকার করি। বৃহস্পতিবার সকালে নৌকার জ্বালানি তেলসহ ৮ হাজার টাকা খরচ করে নদীতে মাছ শিকারে যাই। একটি ইলিশ মাছও পাইনি। কিছু পাঙাশের পোনা (ছোট আকারের) এবং চিংড়ি পেয়েছি। মাত্র তিন হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। নদীতে মাছ না থাকায় আমাদের জ্বালানি খরচও উঠে না।
লুধুয়া মাছঘাটের জেলে নুর আলম নদীতে তিনঘণ্টা জাল পেতে মাছের অপেক্ষায় ছিলেন। তার জালে ছোট আকারের একটি জাটকা ইলিশ আটকা পড়ে। সাথে ছোট আকারের কিছু পোয়া মাছ ধরা পড়ে।
নুর আলম বলেন, এক হাজার টাকার তেল কিনে নদীতে যাই। মাত্র ছয়শ টাকার মাছ বিক্রি করেছি। আমাদের দুটো নৌকা দুই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু মাছ বিক্রি করে জ্বালানি খরচও উঠাতে পারিনি। আপাতত এ কয়েকদিন আর নদীতে মাছ শিকারে যাব না।
একই ঘাটের জেলে নুর ইসলাম নদীতে গিয়ে পুরোপুরি খালি হাতে ফিরেছেন। একটি ইলিশও তার জালে ধরা পড়েনি। তাই হতাশ হয়ে এ জেলে বলেন, নদীতে না যাওয়ায় ভাল ছিল। তেলের টাকাটা লোকসান হতো না।
স্থানীয় জেলে শরীফ ও সফি উল্যা বলেন, অভিযানের পর নদীতে একেবারে মাছ নেই বললেই চলে। জেলেরা বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল থেকে নদীতে মাছ শিকারে নামে। সকাল থেকে অনেক জেলে খালি হাতে ফিরেছে।
নদীতে মাছ না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক আবদুর রব। মাছ না থাকার পেছনে অসাধু ও লোভী জেলেদের দায়ি করেছেন তিনি।
আব্দুর রব বলেন, জেলেরা ছোট ছোট মাছের পোনা শিকার করে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করছে। জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলাকালেও জাটকা মাছ ধরেছে। ঘাটে যে পাঙাশ মাছের পোনাগুলো দেখা যাচ্ছে, এক কেজিতে ২০ টি বেশি হবে। কিন্তু একেকটি পাঙাশের পোনা বড় হতে পারলে ৪/৫ কেজি হতো। চাপিলা নামে যে মাছ শিকার করা হচ্ছে, এগুলো সব ইলিশের পোনা। জেলেরা ব্যাপকহারে পোয়া মাছের পোনা নিধন করছে। এগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পেলে নদীতে মাছের উৎপাদন বেড়ে যেত। ১০ বছর আগেও নদীতে ভরপুর মাছ ছিল, এখন নেই।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মো. শরীফ হোসেন বলেন, টানা দুই মাসের অভিযান শেষে জেলেরা নদীতে মাছ শিকারে নেমেছে। শুরুতে ঘাটে মাছে জমজমাট পরিস্থিতি থাকার কথা ছিল। কিন্তু নদীতে মাছ নেই, তাই জেলেদের জালেও মাছ ধরা পড়ছে না। জাটকা সংরক্ষণ অভিযানে জেলেরা মাছ শিকার করেছে। এ কারণে হয়তো নদীতে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে।
নদীতে মাছের পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, নদীতে এখন পানি বেশি। আবহাওয়া কিছুটা খারাপ। তাই মাছ কম। তবে ২-৩ দিন পর মাছ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।