আজ বিশ্ব মা দিবস। মমতা, স্নেহ আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতীক মাকে সম্মান জানাতে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়।
ছোট্ট একটি শব্দ— ‘মা’, যার ভেতর লুকিয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর অনুভব। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, জীবনের প্রতিটি ধাপে একজন মানুষের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল এই মমতাময়ী নারী।
যুক্তরাষ্ট্রে সূচিত হলেও বর্তমানে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে বিভিন্ন আয়োজনে। সন্তানরা আজ মায়েদের ফুল, উপহার এবং বিশেষ ভালোবাসা দিয়ে সম্মান জানাবেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মায়ের প্রতি ভালোবাসা একদিনের নয়, এটি প্রতিদিনের দায়িত্ব। মায়ের ভূমিকা কখনও একটি দিবসের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা যায় না।
ধর্মগ্রন্থ থেকে শুরু করে সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতিটি শাখায় মায়ের স্থান সবচেয়ে সম্মানের। পবিত্র কোরআনের সুরা লোকমানের ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভধারণ করে।”
মায়ের প্রতি ভালোবাসায় বিশ্বজুড়ে ভাষাভেদে ‘মা’ ডাকের শব্দে অদ্ভুত মিল লক্ষ্য করা যায়। প্রায় সব ভাষাতেই এটি ‘ম’ ধ্বনিতে শুরু হয়। ভাষাবিদ রোমান জ্যাকবসন এর ব্যাখ্যায়, শিশুরা যখন মায়ের দুধ পান করে, তখন মুখভর্তি অবস্থায় যে ধ্বনি তৈরি করে, তা থেকেই ‘মা’ শব্দের উদ্ভব।
বর্তমানের মা দিবসের ধারণাটি জনপ্রিয় করেন মার্কিন নারী অ্যানা এম জারভিস। ১৯০৮ সালে ফিলাডেলফিয়ার এক গির্জায় প্রথমবার মা দিবস পালন করেন তিনি। ১৯১৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে সরকারিভাবে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
মা দিবসে কবি-সাহিত্যিকরা বারবার তুলে ধরেছেন এই সম্পর্কের অন্তহীন মাধুর্য। বাংলা সাহিত্যে রয়েছে অসংখ্য কবিতা— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মনে পড়া’, শামসুর রাহমানের ‘কখনো আমার মাকে’, আল মাহমুদের ‘নোলক’— যেগুলোতে মাকে কেন্দ্র করেই রচিত হয়েছে চিরন্তন ভালোবাসার কাব্য।
আজকের দিনটিকে শুধু একটি উদ্যাপন নয়, বরং মায়ের প্রতি ভালোবাসা নতুন করে প্রতিজ্ঞা করার দিন হিসেবেই দেখছেন সচেতন মহল।
