করোনাভাইরাসে আক্রান্তের বেশির ভাগই ঢাকায়। বাংলাদেশে সংক্রমণের প্রথম দিকেও অন্যান্য স্থানের তুলনায় ঢাকায় বেশির ভাগ সংক্রমণ ঘটেছিল। এখন করোনার শেষ পর্যায়েও ঢাকা মহানগরীতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটছে।
ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, বাংলাদেশে শেষ যে ভ্যারিয়েন্টটি দিয়ে সংক্রমণের হার বেড়েছিল চলতি বছরের মে মাসের পর থেকে তাও দুর্বল হয়ে গেছে। আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানীরা চলতি বছরের মে মাসে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের যে সাব ভ্যারিয়েন্টটির অস্তিত্ব পেয়েছিলেন, তখনই তারা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, ‘ওমিক্রনের এই সাব ভ্যারিয়েন্টটি দুর্বল ধরনের।’ ওমিক্রনের ওই সাব ভ্যারিয়েন্টটির নাম, ‘বিএ.৫ ও বিএ.৪’। এই দুই ভ্যারিয়েন্ট মে থেকে জুলাই পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ালেও হাসপাতালে ভর্তি অথবা মৃত্যুর হারও কম ছিল।
দেশের অন্যান্য স্থানে সংক্রমণের হার কমে গেলেও ঢাকায় দৈনিক শতাধিক সংক্রমণ ঘটছে কেন, এ প্রশ্নের উত্তরে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক জনস্বাস্থ্যবিদ ড. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ঢাকায় বেশি মানুষ একসাথে বাস করে বলে এখানে করোনা সংক্রমণ একটু বেশি। করোনা সংক্রমণ কমাতে হলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এখন যেহেতু সংক্রমণ কমে এসেছে বলে আক্রান্তদের কনট্যাক্ট ট্রেসিং (আক্রান্তের সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদের খুঁজে বের করা) করা সহজ হবে। কনট্যাক্ট ট্রেসিং করে আক্রান্তরা যাদের সাথে মিশেছে, যাদের সংস্পর্শে এসেছে তাদের খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা খুবই সহজ। এদের মধ্যে যারা করোনা সংক্রমিত হয়েছে কিন্তু তারা জানে না, তাদের আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে পারলে ঢাকা থেকে আরো দ্রুত হারে সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২১৭ জন। এর মধ্যে কেবল ঢাকা মহানগরীতেই শনাক্ত হয়েছে ১৮৩ জন। গতকাল একই সময়ের মধ্যে দেশে কারো মৃত্যু হয়নি। নমুনা পরীক্ষার সাপেক্ষে গতকাল করোনা সংক্রমণের হার ছিল ৪.৬২ শতাংশ। গতকাল একই সময়ে সারা দেশে মোট চার হাজার ৬৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ঢাকা মহানগরীতে নমুনা পরীক্ষা করা হয় তিন হাজার ৯১৭টি। গতকাল ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৪ জন।
ড. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ঢাকায় এত মানুষের মধ্যে ১৮৩ করোনা আক্রান্ত রোগী খুব বেশি নয়। তা সত্ত্বেও এটাকে কোনোভাবেই অবহেলা করার অবকাশ নেই। আক্রান্তদের মধ্যে এখন আগের চেয়ে বেশি সচেতনতা এসেছে। কেউ করোনা আক্রান্ত হয়েছে জানতে পারলে তিনি বা তারা সাবধানতা অবলম্বন করেন, অনেকেই বাইরে বের হন না। এটা ইতিবাচক দিক; কিন্তু ভাইরাসটিকে খুব দ্রুত নির্মূল করতে হলে আক্রান্তদের কনট্যাক্ট ট্রেসিং করাটাই উত্তম। এটা করতে সরকার কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।