মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০১৮ সালের ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে ঘষামাজার অভিযোগের দ্বিতীয় দফা তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। ২০১৯ সালে আরেকটি ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেও গত ৯ মাসেও এর আগেরবারে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কমিটি। এরইমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবেদন জমা দিতে তিন দফা তাগাদা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি)। তবে তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘আগামী রবিবারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’
তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু খাতার নম্বরে এদিক সেদিক করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর ইংরেজি খাতায় ঘষামাজা করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কীভাবে করেছে তা কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।’
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফা তদন্ত চলাকালে আলাদাভাবে তদন্তের উদ্যোগ নেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। গত বছরের ২৩ এপ্রিল চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে না পারলেও মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালের ভর্তি পরীক্ষা শেষ করেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ভর্তি পরীক্ষায় মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার খাতায় ভুল উত্তর রাবার দিয়ে মুছে ফেলে বেশি নম্বর দিয়ে ফেল করা পরীক্ষার্থীকে পাস করানোর অভিযোগ ওঠে। অভিযোগে অধ্যক্ষ ড. শাহান আরার বিরুদ্ধে তিন কোটি টাকা আয় করার উল্লেখ করা হয়। এই অভিযোগের প্রথম দফা তদন্ত করে ঢাকার জেলা প্রশাসন। তদন্তে উত্তপত্রে ঘষামাজার অভিযোগের প্রমাণ মেলে। তবে অধ্যক্ষ তিন কোটি টাকা আয় করেছেন এমন অভিযোগের তদন্ত করেনি এই তদন্ত কমিটি।
দ্বিতীয় তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে দ্বিতীয় তদন্ত কমিটির একজন সদস্য মাউশির কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভর্তি নিয়ে অর্থ উপার্জন সংক্রান্ত তদন্ত করবো না। আমরা ভর্তিতে জালিয়াতি করা হয়েছে কিনা সে বিষয়টি ধরেই তদন্ত করেছি।’
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘ইংরেজি খাতায় নম্বরে এদিক সেদিক পাওয়া গেছে। আর ইংরেজি খাতায় ঘষামাজা করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিভাবে করেছে তা কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।’
শ্যামলী সিমু নামের এক অভিভাবকের অভিযোগের পর গত বছরের ১৯ এপ্রিল ঢাকা জেলা প্রশাসককে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান গত ৮ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল, মুগদা ও বনশ্রী শাখায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১২২ জনের খাতা পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনা করা খাতার মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির বালক (ক্যাচমেন্ট) বাংলা মাধ্যম মতিঝিল শাখার ৩৩টি, দ্বিতীয় শ্রেণির বালিকা বাংলা মাধ্যম (মতিঝিল শাখা) ৮টি, তৃতীয় শ্রেণির বালক (উন্মুক্ত) বনশ্রী শাখার ৮টি, তৃতীয় শ্রেণির বালক (বাংলা মাধ্যম) মুগদা শাখার ৭টি ও তৃতীয় শ্রেণির বালক (উন্মুক্ত) বনশ্রী শাখার ৯টিসহ মোট ৬৯টি খাতায় ঘষামাজা ও ওভাররাইটিং থাকায় জব্দ করা হয়। কিছু খাতার উত্তর রাবার দিয়ে মুছে ঘষামাজা ও ওভার রাইটিং করা হয়েছে। কিছু কিছু খাতায় হাতের লেখায় অসাঞ্জস্য রয়েছে।
তদন্তে ঘষামাজার প্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় এ ঘটনা তদন্তে মাউশি আলাদা কমিটি গঠন করে। গত ২৩ এপ্রিল ঢাকা অঞ্চলের পরিচালককে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গত ৯ মাসেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। অন্যদিকে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির ২০১৯ সালের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে।
এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একাধিকবার তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে মাউশির মহাপরিচালকের কাছে। কিন্তু গত কয়েক মাসেও দুদককে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি মাউশি। এ বিষয়ে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নানবলেন, ‘তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করলে জেলা প্রশাসনের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন ও মাউশির তদন্ত প্রতিবেদন দুটোই দুদককে দেওয়া হবে।’
দ্বিতীয় দফা অভিযোগেও মতিঝিলের আইডিয়ালের অধ্যক্ষসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।
সংবাদটি ভালো লাগলে অথবা গুরুত্ত্বপূর্ণ মনে হলে লাইক দিন।
