সাড়ে সাত বছর আগে রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ৭ জনকে দেয়া নিম্ন আদালতের মৃত্যুদণ্ড রায় কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো.মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ।
এর আগে গত ১১ অক্টোবর বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল এহসান জোবায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সব আসামির মৃত্যুদণ্ড যেন বহাল থাকে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
২০১৯ সালে ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান নামে একজনকে খালাস দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জঙ্গিরা।
কারাগারে থাকা ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সাত আসামি হলেন-জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।
মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়ে বিচারক তার রায়ে বলেছিলেন, হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে আসামিরা ‘জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ’ ঘটিয়েছে। সাজার ক্ষেত্রে তারা কোনো অনুকম্পা বা সহানুভূতি পেতে পারে না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ঘটেছিল ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হোলি আর্টিজান হোটেলে। এ হত্যাকাণ্ডটি আমাদের দেশ তো অবশ্যই, সারাবিশ্বেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
ওই হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিক, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২২ জন নিহত হন। গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার পর ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। এই হামলা মামলায় ১১৩ জন সাক্ষী হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকের তীরে হোলি আর্টিজান বেকারির সবুজ লন ছিল বিদেশিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বিদেশিদের নিয়মিত আনাগোনা এবং শিথিল নিরাপত্তার কারণেই ওই রেস্তোরাঁকে জঙ্গিরা হামলার জন্য বেছে নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যু দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলার ডেথ রেফারেন্স ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্টে আসে। এরপর এক হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার এই পেপারবুক শুনানির জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়। চলতি বছর মে মাসে আপিল আবেদনের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ১১ অক্টোবর শেষ হয়।