নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ডধারীদের কাছ থেকে ৫ মাসের চাল বিতরণের সময় জোরপূর্বক টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় প্রত্যেক সুবিধাভোগীর কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান। আর এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন ইউপি সদস্যসহ গ্রাম পুলিশ।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার (০২ জুন) দুপুরে তিলকপুর ইউনিয়নের রাইঝোর ব্রিজ মোড় এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন প্রায় দুই শতাধিক ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী।
অভিযোগ উঠা ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান মো. সোহেল রানা। পাশাপাশি এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম রিঙ্কু, নারী ইউপি সদস্য শাহানাজ পারভীন ও গ্রাম পুলিশ মো. আলামিন।
বিক্ষোভ সমাবেশে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, সরকারের দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচির আওতায় দুই বছরের মেয়াদে উপকারভোগীদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাল বিতরণ করা হয়ে থাকে। পুরোনো মেয়াদ শেষ হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নতুন তালিকা না হওয়ায় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চাল বিতরণ বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে পুরোনো কার্ডের মেয়াদ বাড়িয়ে একসঙ্গে ৫ মাসের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়, প্রতিজনকে মোট ১৫০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। সেই চাল পেতে গিয়ে উপকারভোগীদের গুনতে হয় ১ হাজার টাকা করে। এই ইউনিয়নে ২৮১ জন কার্ডধারীর মধ্যে প্রায় ২০০ জনের কাছে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
ভুক্তভোগী আঙ্গুরী আক্তার বলেন, চাল দেওয়ার আগে গ্রাম পুলিশ মো. আলামিন হুমকি দিয়ে ১ হাজার টাকা নিয়েছে চেয়ারম্যানের নাম করে। টাকা না দিলে চাল দিত না। তাই বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হয়েছে।
সাবিনা ইয়াসমিন নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম রিঙ্কু আমার কাছ থেকে চেয়ারম্যানের কথা বলে চাল দেওয়ার জন্য ১ হাজার টাকা নিয়েছে। যদি টাকা না দেয় তবে চাল দিতে পারবে না বলে হুমকি দিয়েছিল। তাই টাকা দিয়েই চাল নিতে হয়েছে।
সাজেদা বেগম, আনোয়ার হোসেন, সুলাইমান আলীসহ স্থানীয় আরও বেশ কয়েকজন বলেন, ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশদের সহযোগিতায় প্যানেল চেয়ারম্যান সোহেল রানা যোগসাজশ করে কার্ডধারীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে হুমকি দিয়ে ১ হাজার টাকা করে নিয়েছে। যেটা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। তাদের পকেট ভরাতেই উপকারভোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার কঠিন শাস্তির দাবি করছি।
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কাজ জনসেবা করা। কিন্তু তারাই যখন জনগণের গলার কাঁটা হয়, তখন তাদের কাছে ভালো কোনো সেবা প্রত্যাশা করা যায় না। এখানে প্রায় ২ শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করছে। এই ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হোক।
জানতে চাইলে গ্রাম পুলিশ মো. আলামিন জানান, ইউপি সদস্য শাহানাজ পারভীন ও প্যানেল চেয়ারম্যান সোহেল রানার নির্দেশে আমি ৪০ জনের কাছে থেকে ১ হাজার করে টাকা তুলেছি। তাদের নির্দেশে আমি এটা করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে করিনি।
ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম রিঙ্কু সকল অভিযোগে অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো কাছে থেকে টাকা নিইনি। আমার ৩নং ওয়ার্ডে এসে খোঁজ নিতে পারেন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।
তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, চাল দেওয়া বেশ কয়েকদিন আগে ইউপি সদস্য বা গ্রাম পুলিশ যদি টাকা নিয়ে থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে জানালো না কেন। আর এই টাকা নেওয়ার সঙ্গে আমি কোনো ভাবেই জড়িত নয়। এগুলো মিথ্যা অভিযোগ।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইবনুল আবেদীন বলেন, সুবিধাভোগীর কাছে থেকে কোনো ধরনের টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। যদি কেউ নিয়ে থাকে এবং অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রমাণ মেলে তবে অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
