মোঃ আব্দুস সালাম- চিরিরবন্দর ( দিনাজপুর ) প্রতিনিধি :
চারদিকে মিষ্টি মৌ মৌ গন্ধ সবুজ পাতার মধ্যে স্বর্ণালী লিচুর মুকুলে ভরে গেছে চিরিরবন্দর উপজেলার লিচুর গাছগুলোতে । চারিদিকে লিচুর ফুল আর মুকুলের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
আধুনিক পদ্ধতিতে ভ্রাম্যমাণ মৌ-খামারে আহরণ হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মধু। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও উৎপাদিত এ মধু রপ্তানি করা যেতে পারে বলে আশাবাদী ভ্রাম্যমান মৌচাষিদের । অন্যদিকে মধু অধিক লাভজনক হওয়ায় চিরিরবন্দরে ভ্রাম্যমাণ মৌ-খামারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
গত বছরের তুলনায় এ বছর লিচু গাছে ফুল ও মুকুলের পরিমাণ অনেক বেশি। লিচুর মুকুল যেন ঝড়ে না পড়ে, মুকুল টেকাতে পরিচর্যায় কোনো ঘাটতি রাখছেন না চাষিরা।
সরেজমিনে চিরিরবন্দর উপজেলার ১০ নং পুনটি ইউনিয়নে বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা গেছে, ৬-৭টি স্থানে ৮-৯শ ’মৌ বাক্স’ বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছে মৌ চাষিরা।দেখা যায় লিচুর উৎপাদন বাড়াতে বাগানে বাগানে চাষিরা মৌমাছির ’মৌ বাক্স’ বসিয়েছে। পাশেই নিজেদের তৈরি ছোট মাচায় থাকে বাক্সের তদারকি করছে মৌ চাষিরা। গাছের নিচে সারি সারি করে সাজিয়ে রেখেছেন কাঠের তৈরি বাক্সগুলো। সেখান থেকে দলে দলে মৌমাছির ঝাঁক বসছে লিচুর মুকুলে। মুকুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছির দল নিজ নিজ কলোলিতে মৌচাকে মধু এনে জমা করছে। ৭-৮ দিন অন্তর অন্তর প্রতিটি বাক্স থেকে চাষিরা মধু সংগ্রহ করছেন।
প্রতিটি বাক্সে একটি রানী মৌমাছি, একটি পুরুষ মৌমাছিসহ অসংখ্য এপিচ জাতের কর্মী মৌমাছি রয়েছে। কর্মী মৌমাছিরা ঝাঁকে ঝাঁকে লিচুর মুকুলে ছুটে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে বলে জানান মৌ চাষিরা। মৌমাছির মাধ্যমে মুকুলের পরাগায়ণ ঘটানোর মাধ্যমে লিচুর ফলন ভাল হয়। ফলে যে গাছে মৌমাছির বেশি আগমন ঘটে সে গাছে লিচুর যেমন বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকে , তেমনই মৌ চাষিরা বেশি মধু সংগ্রহ করে বানিজ্যিকভাবে বিপুল পরিমান অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়।
বাগানে মৌমাছি চাষে লিচুচাষি ও মৌ খামারি দুপক্ষই লাভবান হচ্ছে। এতে বেকারত্ব দূরের মাধ্যম লিচুর ফলন বৃদ্ধি পায়। লিচুর বাগান থেকে সংগ্রহ করা মধু যেমন খাঁটি তেমনই সুস্বাদু। মানের দিক থেকে ভাল হওয়ায় এর চাহিদা অনেক বেশি। প্রতি বছর দেশের নানান প্রান্ত থেকে মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করতে চিরিরবন্দরে বিভিন্ন বাগানে আসে। গাছে থোকা থোকা লিচুর মুকুল আগমনই বলে দিচ্ছে এবার ভাল লিচুর ফলন হবে।
সিরাজগঞ্জ সদর থেকে আসা শাহাদাৎ হোসেন, আব্দুস সাত্তার, কাওসার আলী তিনি বলেন, একটি লিচু-বাগানে ২০০ বাক্স রেখেছি। মৌমাছিরা ঝাঁক বেঁধে লিচুর মুকুল থেকে মধু সংগ্রহ করে নিজ নিজ বাক্সের ভেতরে এসে মধু জমা করে। প্রতি মণ মধু ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করি। দেশের বিভিন্ন কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে মধু কিনে নিয়ে যায়। স্থানীয় অনেক লোক আসে মধু ক্রয় করতে। এ মধুতে কোন ভেজাল নেই, একদম খাটি মধু।
তারা আরোও জানান, প্রতি বছর আমরা মধু সংগ্রহ করতে আসি। সেরা বাগান থেকে আমরা মধু সংগ্রহ করি। যে বাগানে ফুল বেশি, তেমন বাগানে বাক্স বসাই। মৌমাছির চাকগুলোর বাক্স প্রথমে বাগানে রেখে দেওয়া হয়। প্রতিটি লিচুর বাগানে দেড়শ বাক্স রাখা রয়েছে। লিচুর ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করার পর মৌমাছিরা বাক্সের ভেতরে চাকে মধু জমা করে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বাক্সে পাঁচ কেজি মধু জমা হয়। আবার কিছু কিছু বাগান মালিকের সঙ্গে বাক্স লাগানোর সময় বাধার সম্মুখীন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চিরিরবন্দর ১২টি ইউনিয়নে প্রায় ৮৬৩ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান আছে । মধু সংগ্রহের জন্য মৌয়ালরা মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন ৮ হাজার ৫০০টি। বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি লিচু-বাগানে ২০০টি করে বাক্স রয়েছে।
লিচু-চাষি মোঃ আব্দুল কুদ্দুস জানান, লিচুর মুকুল থেকে মৌমাছিরা যদি মধু সংগ্রহ করে, তাতে পরাগায়ন হলে লিচুর ভালো ফলন হয়। ফলে কীটনাশক তেমন দরকার হয় না। তাই বিনা মূল্যেই মৌয়ালদের মৌমাছির বাক্স বাগানে বসাতে দেই।
১০ নং পুনটি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী মোঃ ওবায়দুল্লাহ জানান, এই উপজেলার নির্দিষ্ট করে কোন চাষী মধুচাষ করেন না। তবে উপজেলার বাইরে থেকে এসে অনেকে মধুচাষ শুরু করেছেন।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা- জোহরা সুলতানা শারমিন জানান, লিচু ফুল ও মুকুলে মৌমাছি বসলে পরাগায়ন ভালো হয়, রোগবালাইও অনেকটা কম হয়। সে ক্ষেত্রে অনেক বাগানে গুটি আসার পর কীটনাশক দরকার হয় না। এতে ঐ লিচু-বাগানে বাম্পার ফলন হওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে। এতে লিচুর যেমন বাম্পার ফলন হয়, তেমনি মধুও উৎপাদন হয় ভালো।